নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উত্থাপনের অবকাশ নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি)। গত ১২ বছরের সব বিসিএস ও রেলওয়ের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। টেলিভিশন প্রচারিত প্রতিবেদন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত এসব পরীক্ষার বিষয়ে বিরূপ প্রচার বিপিএসসির ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস বা প্রতারণার সঙ্গে কেউ জড়িত প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার (৮ জুলাই) বেসরকারি টেলিভিশন বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিপিএসসি এমনটি জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল রোববার (৭ জুলাই) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বিপিএসসির বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এবং অন্যান্য নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, সে বিষয়ে বিপিএসসির দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
আরো পড়ুন: প্রশ্নফাঁসের সব টাকা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি: আবেদ আলী
গত এক যুগে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে টেলিভিশনটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, গত ১২ বছরে বিপিএসসিতে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো মহল থেকে কখনোই কোনো ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না বিধায় এটি প্রমাণিত যে, ওই সকল পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে নতুন করে কোনো রূপ অভিযোগ উত্থাপনের অবকাশ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত শুক্রবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ওই দিন পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে আসে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে প্রতিটি বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬ সেট প্রশ্নপত্র এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পূর্বে লটারি করা হয়। বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে লটারির সময় দেশের প্রথিতযশা দুজন নাগরিক, কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ উপস্থিত থাকেন।
একইভাবে, নন-ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ উপস্থিত থাকেন। গত ৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ শুক্রবার বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সে বিষয়টি সকাল ৯.৩০ মিনিটে সংশ্লিষ্টদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে কারও জানার সুযোগ নেই।
কমিশনের আওতাভুক্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র সমীক্ষণ ও মুদ্রণ সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে করা হয় এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এসব কারণে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।
এর আগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশনে ‘বিসিএস প্রিলি-লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করা হয়।
টিভি চ্যানেলটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ গত শুক্রবার (৫ জুলাই) অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে একটি চক্র। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিসিএসসহ ৩০টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত পিএসসির কয়েকজন কর্মকর্তা।