বাতিল হতে পারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা। অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা নিয়ে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শিগগিরই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ আমলে তৃতীয় ধাপের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগটির গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অদক্ষতা ও মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন। িএমনকি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় আদালত নতুন করে তদন্তের নির্দেশনা দিলে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃতীয় ধাপের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের যে তদন্ত হয়েছে তা সন্তোষজনক নয় বলেও জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দরকার ছিল। একটি স্বাধীন কমিশন কিংবা সংস্থার অধীনে তদন্ত করার দরকার ছিল। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে এ পরীক্ষা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১টি জেলার পরীক্ষা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার সংশোধিত ফল গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। এতে ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হন। আর এই পরীক্ষা ২৯ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষার সময়ই প্রশ্নফাঁস নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর ঢাবি শিক্ষার্থীসহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ‘প্রশ্নফাঁস চক্র’ পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আসামিরা।
এ বিষয়ে তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেছিলেন, তৃতীয় ধাপের প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে রমনা থানায়ও মামলা হয়েছে। গ্রেফতার পরীক্ষার্থী হলেন মনীষ গাইন, পংকজ গাইন ও লাভলি মন্ডল। এই তিন জনকে আদালতে গত ২৫ এপ্রিল প্রশ্নপত্র ফাঁসে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যদিকে প্রশ্নপত্র সমাধানকারী ছিলেন দুই জন। একজন জ্যোতির্ময় গাইন ও অন্যজন সুজন চন্দ্র রায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসকারী চক্র স্বীকার করার কারণে প্রকাশিত পরীক্ষার ফল নিয়ে বিতর্ক উঠবে এটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষার সময়ই যখন প্রশ্নফাঁস নিয়ে অভিযোগ ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করা। প্রয়োজনে পরীক্ষা বাতিল করা। কিন্তু তারা তা করেনি।
হাবিবুর রহমান নামের এক প্রার্থী জানিয়েছেন, শুধু তৃতীয় ধাপ নয়, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেরও ফল বাতিল করে নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাই। পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া না হলে ধরে নেব যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশার জন্য আবেদন করে কোনো লাভ নেই। কারণ প্রতিবারই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে; কিন্তু এর কোনো সুরাহা হয় না।