সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৩৭ হাজার ৫৭৪ প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। যাঁরা সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন, তাদের আগে জানা দরকার এই চাকরির বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কেমন।
কোন গ্রেডে কত বেতন
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাঁরা যোগ দেবেন, শুরুতেই তাদের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে (১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা)। মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা ও যাতায়াত ভাতা রয়েছে।
বেতনের বাইরে যেসব ভাতা
মূল বেতনের বাইরে একজন নতুন সহকারী শিক্ষক চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, টিফিন ভাতা ২০০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা পাবেন। বাড়িভাড়াও রয়েছে। তবে এলাকাভেদে বাড়িভাড়ায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া। অন্যান্য স্থানের জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ।
মোট বেতন কত
রংপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, নবীন সহকারী শিক্ষকেরা সব মিলিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় যোগ দিলে বেতন পাবেন ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় হলে বেতন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য স্থানে হলে বেতন পাবেন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা।
যেসব উৎসব ভাতা
প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি অর্থাৎ ৫৫০ টাকা বেতন বাড়বে। বছরে মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা। অর্থাৎ ১১ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা। মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা রয়েছে প্রতিবছর। এ ছাড়া চাকরিজীবনে দুটি টাইম স্কেল পাবেন শিক্ষকরা।
পদোন্নতি
গাজীপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে পদোন্নতি তেমন হয় না। উপজেলায় পদ খালি থাকা সাপেক্ষে পদোন্নতি পাওয়া যায়। অনেকে চাকরিজীবনের ২০ থেকে ২২ বছর পার করে প্রথম পদোন্নতি পান। আবার কেউ চাকরির সারা জীবনেও পদোন্নতি পান না।
অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা
অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় সন্তানের জন্য পোষ্য কোটা রয়েছে। যোগ্যতা সাপেক্ষে আপনি এক বছর বিদেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন।
খরচ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। চাকরির পাঁচ বছর পূর্ণ হলে আপনি পেনশনের আওতায় পড়বেন। চাকরি শেষে পাবেন ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ল্যামগ্রান্ড, এক বছরের পিআরএল, অর্জিত মূল বেতনের ২৩০ গুণ পেনশন ও আজীবন পারিবারিক পেনশন। ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হলে পেনশনারদের মাসিক চিকিৎসা ভাতা হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা।