সাভারের কোন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে মহাজোচ্চুরির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন আগেই ফাঁস হয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ছাপানো প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে। আবার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি পাস তাদেরকেও কম্পিউটার চালানোর পরীক্ষা নিয়েছে। মূলত নিজ পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের জন্যই এমনটা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। আর পদগুলোর প্রতিটিতে নিয়োগে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠান প্রধান কলিম উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, গত ৬ ডিসেম্বর ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, রাজধানীর শেরে বাংলা নগর বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কোন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন।
স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী ঠিক করে রেখেছিলেন। তাই সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করতে দেয়া হয়নি। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তারপরও ৬ ডিসেম্বর ছাপানো প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। যদিও হাতে লেখা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিলো। নিয়োগ কমিটির একজন এ নিয়ে আপত্তি তুললেও তড়িঘড়ি করে বানানো প্রশ্নেই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, প্রতিষ্ঠান প্রধান সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস করেছেন।
নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, ওইদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের দায়িত্বে থাকায় নিয়োগ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা কিছুটা দেরিতে প্রতিষ্ঠানে আসেন। দেরির হবে এমনটা তারা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। তারা এসে প্রশ্ন তৈরি করার কথা থাকলেও সেখানে আগে থেকে প্রশ্ন তৈরি করা ছিলো। নিয়োগ পরীক্ষায় লেনদেন নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন হচ্ছিলো। আবার অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ একই প্রশ্নে নেয়া হয়। যদিও অফিস সহায়ক নিয়োগের কম্পিউটার দক্ষতা যাচাইয়ের নিয়ম আছে, যদিও কোন্ডা স্কুলের নিয়োগে তা নেয়া হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিজ নিয়মে পরীক্ষা নিতে উৎসাহিত করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক বলেন, এ নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি যিনি ছিলেন তিনিই ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠান প্রধান কলিমউদ্দিনের নিয়োগেরও ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন। প্রধান শিক্ষক ও ডিজির প্রতিনিধি যোগসাজসে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যতো দূর জানি, অনিয়মের বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয়ও বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কলিম উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ নিয়োগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে। ছাপানো প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া যাবে না এমন বিধান নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ডিজির প্রতিনিধি ও আমি এ নিয়োগের প্রশ্ন করেছি। সব অভিযোগ অসত্য।
এ নিয়োগ বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুন্নাহারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।