২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে (ঢামেক) ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী। তাদের অনেকেই পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হয়ে বের হতে পারেননি। এই ৪০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনকে নজরদারিতে রেখেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
সিআইডির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। এখন অবৈধভাবে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনে যারা বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন তাদের সবাইকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এজন্য গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই চক্রের পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের শনাক্তে কাজ করছে একাধিক তদন্তকারী দল।
গতকাল বুধবার সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, মেডিক্যালের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আমাদের সাইবার পুলিশ সেন্টার ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট কাজ করছে। এ ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের গ্রেপ্তার করে ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আরও কারা এই চক্রে জড়িত তাদের শনাক্তে কাজ চলছে, শিগগিরই তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ছড়িয়েছে। সে বছর প্রশ্ন কিনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া অন্তত ১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের প্রাথমিক তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এই ১৫ শিক্ষার্থীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। মেডিক্যালে ১৬ বছরে ১০ বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অসংখ্য শিক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের পরিচয় শনাক্ত করে তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে। গত ১৩ আগস্ট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার সিআইডি। তাদের মধ্যে আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। এতে অন্য সদস্যদের নাম পাওয়া যায়। এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় খুলনার পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুলনা থেকে গ্রেপ্তার মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিম খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার। খুলনা শহরের আলোচিত মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের মালিক। মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। তাদের মধ্যে ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষার সব বিষয়েই ফেল করেছেন। একাধিকবারের চেষ্টায় তিনি পাস করেন। এ ছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিমের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র কিনে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন।