সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ১ লাখ টাকার বিনিময়ে এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের চুক্তি হয়েছিল। পরীক্ষার আগের রাতে চুক্তিতে রাজি হওয়া প্রার্থীদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে গিয়ে তাদের প্রশ্ন ও উত্তর পড়ানো হয়। পরে সকালে নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ওই প্রার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রশ্ন পেয়ে প্রিলি পরীক্ষা দেওয়া এসব প্রার্থী উত্তীর্ণও হয়েছেন। প্রিলিতে পাস করার পর চুক্তিতে থাকা প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল চক্রটি।
শুক্রবার (১২ জুলাই) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পিএসসির কর্মচারী সাজেদুল ইসলাম সাজু ৪৬তম বিসিএসের প্রশ্নফাঁসকাণ্ডের মূলহোতা। তার কাছ থেকে ৪৬তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেন মাহমুদুল হাসান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের এক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি নাটোরে। সম্প্রতি মাহমুদুল বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা অকপটে স্বীকার করে মাহমুদুল হাসান বলেছেন, পিএসসির কর্মচারী সাজেদুল ইসলাম সাজু আমাকে মোহাম্মদপুর থেকে একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আমাকে সকালের দিকে ২০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন দেন। ওইটা পড়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি কমন পড়ছে। ১ লাখ টাকার বিনিময়ে এ চুক্তি হয়েছিল।
এ বিসিএসে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেন রুবেল নামে আরও এক প্রার্থী। তিনি বলেন, পরীক্ষার আগের রাতে মাহমুদুল (ঢাবির সাবেক ছাত্র) ভাই আমাকে আইডিবির সামনে আসতে বলেন। সেখান থেকে তারা আমাকে গাড়িতে করে মোহাম্মদপুর নিয়ে যান। মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় আমাদের রাত ৯-১০টার দিকে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয়। ওই বাসায় আরও লোকজন ছিলেন। তারা আমাদের সারা রাত ওই প্রশ্নগুলো সমাধান করিয়েছেন। তারপর আমাদের সকালে ছেড়ে দিয়েছেন। পরে আমরা সবাই যে যার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।
রুবেল বলেন, প্রিলির জন্য ওই রাতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ প্রশ্ন পড়ানো হয়েছে। প্রিন্ট করা কাগজে তাদের ওই প্রশ্নগুলো সরবরাহ করা হয়। মোহাম্মদপুরের বাসার যে রুমে আমি প্রস্তুতি নিয়েছি, সেখানে ৮-৯ জন ছিলেন। আর ওই বাসায় আমার মতো আরও ১০০ জন প্রশ্ন পেয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার সঙ্গে ২ লাখ টাকায় প্রশ্ন
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চক্রটি ৩৩তম থেকে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে আসছে। এতে পিএসসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। প্রতিবেদনটি প্রচারের পর সিআইডি অভিযান চালিয়ে পিএসসির সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। চক্রে পিএসসির আরও ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে সিআইডি। অন্যদিকে পিএসসি গ্রেপ্তার ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এবং দুদককে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া কোচিং ব্যবসায় জড়িত এমন পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি। পর্যায়ক্রমে অন্য আরও কয়েকজনকে নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পিএসসি সূত্র।