ফাও খাটছেন অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

‘ঐতিহ্যবাহীর সংজ্ঞায় ঘুরপাক’ফাও খাটছেন অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকরা

এনামুল হক প্রিন্স |

রাজধানীর দক্ষিণখান আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ফারুক উজ্জামানের চাকরির ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে। অবসরের দুই মাস আগে তাকে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য সুপারিশসহ সব কাগজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষা করছে এক বছর ধরে।

অনুমতি না পাওয়ায় ফারুক উজ্জামান তার সহকর্মীদের টিটকারির শিকার হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছেন না, আবার বিদায়ী প্রধান শিক্ষকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদনও মিলছে না। ফারুক উজ্জামানের পক্ষে একজন বিষয়টি খোঁজ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন গত সপ্তাহে। জানতে পারেন কয়েকশ আবেদন জমা পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ে।

শুধু হাফিজুর নন। কুমিল্লার দেবীদ্বারের ফুলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরও ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি এখনও অফিস করছেন। অপেক্ষায় আছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের। কিন্তু একইভাবে কাগজপত্র অধিদপ্তর হয়ে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছুলেও নিয়োগ অনুমোদন হয়নি এখনো।

উপরন্তু, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আবেদন করে অনিশ্চয়তার শঙ্কায় পড়ছেন অবসরের সময় হয়ে আসা আরও অনেক শিক্ষক। এমনই একজন হলেন-রংপুর মহানগরস্থ রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবুল মুযন আযাদ। বয়স ৬০ হয়ে যাওয়ার নিয়মে আগামী ২ মার্চ তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদন করেছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটি তার আবেদন মঞ্জুরও করেছে। সর্বোপরি, রংপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগম ওই শিক্ষকের পক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশ করেছেন। এমন সুপারিশ প্রাপ্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

প্রসঙ্গত, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে জারি করা স্কুল কলেজের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর ১১.১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ (এমপিও) ষাট বছর বয়স পর্যন্ত প্রদেয় হবে। তবে ঐতিহ্যবাহী ও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এবং সরকারের কোনো আর্থিক সুবিধা বা এমপিও না নেয়ার শর্তে সরকারের অনুমোদনক্রমে শুধু প্রতিষ্ঠান প্রধানের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকসহ সব দায়ভার বহন করতে হবে এবং সরকারের কোনো দায় থাকবে না। এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বয়স কোনক্রমেই পঁয়ষট্টি বছরের বেশি হতে পারবে না।

নীতিমালায় চুক্তিভিত্তি নিয়োগের কথা বলা থাকায় এ ধরনের নিয়োগ চেয়ে আবেদন করা  শিক্ষকদের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অনুমোদন এখনো মেলেনি।

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘ঐতিহ্যবাহী’ ও ‘মান সম্মত’র সংগায় আটকে আছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মাত্র ১৬ বছর আগের প্রতিষ্ঠানও দাবি করছে তাদেরটা ঐতিহ্যবাহী কিন্তু তা মানতে রাজী নন অধিদপ্তরের কর্তারা।

‘নামমাত্র শিক্ষার্থী ও পাসের হার কিন্তু তারা দাবি করছেন মান সম্মত,’ এমন শত শত প্রতিষ্ঠানের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য স্থানীয় সাংসদের কাছ থেকে ডিও (আধা সরকারি) লেটার, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির প্রশংসাপত্র যোগাড় করতে  টাকা খরচ হয় প্রচুর। এগুলো না যায় বলা, না যায় সওয়া।

ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো না পাচ্ছেন নতুন নিয়মিত প্রতিষ্ঠান প্রধান, না পাচ্ছেন বিদায়ী প্রধানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন। এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান থেকে এসব শিক্ষক বেতন ভাতা বৈধভাবে তুলতে পারছেন না। আর নিয়মমাফিক তাদের এমপিও বন্ধ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা। অপর দিকে, নিয়মিত প্রতিষ্ঠান প্রধান না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (কলেজ) এনামুল হক হাওলাদার বলেন,  আমাদের কাছে যেসব আবেদন এসেছে সব মন্ত্রণালয়ে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি। শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কুল শাখার উপ-পরিচালক আজিজুর রহমান দুই মাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া গেছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের হাজার হাজার ফাইল আটকে রয়েছে।

 

সিটি কর্পোরেশন এলাকাভূক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ - dainik shiksha সিটি কর্পোরেশন এলাকাভূক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ দেশের সব ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশনা - dainik shiksha দেশের সব ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশনা সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ - dainik shiksha সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজসমূহ অনির্দিষ্টকাল বন্ধ - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজসমূহ অনির্দিষ্টকাল বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল বন্ধ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত আতঙ্কে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha আতঙ্কে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থীর পরিচয় মিলেছে - dainik shiksha ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থীর পরিচয় মিলেছে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030050277709961