রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রতি বছর ভর্তির সময় নবীন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ টাকা সাংস্কৃতিক ফি ও ৩০ টাকা টিএসসিসি ফি নেওয়া হয়। অথচ ক্যাম্পাসে সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সরাসরি কোনো আর্থিক সহায়তা পায় না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে থেকে। এমনকি ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে ভাড়া পরিশোধের পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেম, সাজসজ্জাসহ সংশ্লিষ্ট সব খরচ বহন করতে হয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে। অবশ্য কোনো কোনো সময় বিশেষ দিবসের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নামমাত্র সাহায্য করে থাকে।
সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্বস্থানীয়রা বলছেন, একসময় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে মুখরিত ছিল রাবির ক্যাম্পাস। কিন্তু বর্তমানে সংগঠনগুলোর কর্মতৎপরতা কমেছে বেশ কিছু কারণে। যেগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, কর্মী সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি না থাকা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জায়গার স্বল্পতা অন্যতম।
রাবি টিএসসিসির তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে বর্তমানে মোট নিবন্ধিত সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে ১৬টি। তবে কর্মী ও আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে এর মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বেশ কিছু কারণে টিএসসিসির সঙ্গে তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোর বিরোধ রয়েছে। যার কারণে তারা সেখানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে না।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের সদস্যদের মাসিক চাঁদার টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফলে কোনো অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করতে যে পরিমাণ আর্থিক বা অবকাঠামোগত সাহায্য দরকার, সেটি সব সময় সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে নাট্যব্যক্তিত্ব ও রাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিন স্তরে বিভক্ত। যার সবচেয়ে নিম্নস্তর ক্লাসরুমের শিক্ষা। এখন শুধু এই নিম্নস্তরই রয়ে গেছে। বাকি স্তরগুলো দিন দিন একেবারে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মা-বাবা তাদের ছেলেমেয়েদের ঘরের গ-ির ভেতর আটকে রাখেন। তাহলে তারা কীভাবে দেশের
সংস্কৃতিকে লালন করবে?’এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘টিএসসিসি বা সাংস্কৃতিক যে ফি নেওয়া হয়, সেই টাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রাপ্য। তবে তা ক্যাশ (নগদ) আকারে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ভলান্টারি অর্গানাইজেশন আছে, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টের অংশ না। এই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ঘর, খরচ, অনুষ্ঠান করলে হল দরকার। এখন তো উল্টো দখা যায় টিএসসিসির হল ভাড়া নিতে হয়। বাইরে থেকে লাইট-মাইক আনতে হয়। এ ছাড়া টিএসসিসিতে টেকনিক্যাল মহড়া করার উপায় নেই। অ্যাকুস্টিক সিস্টেম অত্যন্ত খারাপ।’
রাবির ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সভাপতি মনির হোসাইন জানান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য তারা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো অনুদান পান না। সংগঠনের যেসব সদস্য রয়েছেন, তাদের মাসিক চাঁদার পাশাপাশি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটারভুক্ত সংগঠনগুলোকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণলায় থেকে একটা বাজেট দেওয়া হয়, যা দিয়ে তারা অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করে থাকেন।
রাবির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ড. অমিত কুমার দত্ত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে মুখে সহযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। মাঝে প্রশাসনের দু-একজন ব্যক্তি স্বউদ্যোগে কিছু সহযোগিতা করেছেন। প্রশাসন যদি আসলেই মনে করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হোক, তাহলে এ জায়গায় তাদের ভর্তুকি দেওয় উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিএসসিসির পরিচালক ও নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হায়দার বলেন, ‘বর্তমানে বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লাস বিকেল ৫টা পর্যন্ত হওয়ায় ক্লাস শেষে আর শিক্ষার্থীরা সেভাবে কোনো সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য কোনো বাজেট না থাকায় এই অঙ্গন ঝিমিয়ে পড়ছে।’
সার্বিক বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। তাদের কার্যক্রমে হয়তো অপ্রতুল, কিন্তু কিছু না কিছু সহায়তা প্রশাসন থেকে দেওয়া হচ্ছে সব সময়।’