ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেছেন, এটা দিয়ে (ফেসবুকে প্রশ্ন ছড়ানো) প্রশ্নফাঁস প্রমাণ হয় না। আপনারা যে কেউ একটা মোবাইল ফোন আমাকে দেন। পাঁচদিন আগে একটা ছবি আপনি পোস্ট করেছেন, সেটা আমি আজ অনুষ্ঠিত একটা পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে বদলে দিতে পারবো। মনে হবে পরীক্ষার পাঁচদিন আগে এ প্রশ্নপত্রটা পোস্ট করা হয়েছে। এটা করা সম্ভব। এ ধরনের ঘটনা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, এটা প্রমাণ করা যায় না।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াও তুলে ধরেন তিনি।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া লটারির আগে কোন নাম্বার উঠবে কারো পক্ষে জানা সম্ভব না। এ সময় লটারির যন্ত্রাংশ দেখিয়ে তিনি বলেন, এটাতে কাগজ থাকে। এক মানে পদ্মা, দুই মানে যমুনা।
তিনি বলেন, এই লটারি যখন হয় তখন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন থাকি। নন ক্যাডারের ক্ষেত্রে বাইরের কেউ থাকেন না। কিন্তু, পরীক্ষার আগে আমি বলছিলাম যে আরো পরে লটারি করি, আমাদের টেস্ট করার জন্য একটু আগে করতে হয়, সাড়ে নয়টায় করতে হয়, ওরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এখন করতে হবে ২৫ বেজে গেছে। ৯টা ২৫-এ আমি লটারি করেছি।
তবে প্রশ্নফাঁস যে হয়নি বা হতে পারে না, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমি এটুকু বলবো, এটা (প্রশ্নফাঁস) করা ভীষণ ভীষণ কঠিন।’
সোহরাব হোসাইন বলেন, পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যিনি তৈরি করেন, তার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন থাকে। অনেক সময় তারা প্রশ্নপত্র তৈরি করেন সরাসরি, অনেক সময় ডাকযোগে পিএসসিতে পাঠান। সেটা সিলগালা করা থাকে। ১০ জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ার পর একদিন আমরা প্রশ্নপত্র মডারেশনের জন্য বৈঠক ডাকি। গোপন কক্ষে সিলগালা করা সেই প্রশ্ন খোলা হয়। সেখানে মডারেশনের কাজ শেষে আবারো সিলগালা করে বের করা হয়। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় প্রশ্ন প্রেসে যায়। প্রেস থেকে আসার পর পুলিশ প্রহরায় একটি কক্ষে তালাবদ্ধ রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, যেদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন দু‘জন বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে এখানে (পিএসসি) লটারি হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা হলে ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে ৯টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রে জানাতে হয়। বিসিএসের ক্ষেত্রে ছয় সেট থেকে একটি সেট লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়। আর নন-ক্যাডার বা দশম গ্রেড ও তার পরের গ্রেডগুলোর জন্য চারটি সেট থাকে, সেখান থেকে লটারিতে একটি নেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁস করাটা কঠিন।
তবে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রশ্নফাঁস হয়েছে কিনা তদন্তে তা প্রমাণ করা হবে। প্রশ্নফাঁসে যার নামই আসুক না কেনো তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রশ্নফাঁস নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, সে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যদি প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি তদন্ত কমিটির সুপারিশের ওপর নির্ভর করবে।