আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাককে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে বহু মানুষ কাজ করেছিলো বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জীবন ও কর্মের ওপর ঢাকা কলেজে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। কলেজের বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ন ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের বাঙালির যে স্বাধীনতার স্বপ্ন, সেদিকে বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি বাঙালিকে যেমন স্বাধীনতার দিয়েছেন তেমনি মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তি বাঙালিকে দিতে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিলো, সামনে আমরা কিছু হত্যাকারীকে পাই এবং পেছনে রয়েছে অনেক কুশীলব। আজকে আটচল্লিশ বছর পর দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এখন অনেক গবেষণা হয়েছে, সেই সময়কার অনেক তথ্যই মানুষের জানা। মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসরা, সেখানে ক্ষমতাধর কিছু রাষ্ট্রও ছিলো। তাদের ষড়যন্ত্রে সেনবাহিনীর কিছু সদস্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো। তৎকালীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাককে সামনে রেখে এবং এ হত্যাকাণ্ডে পেছনে বহু মানুষ কাজ করেছিলো।
তিনি আরো বলেন, যারা পাকিস্তানকে পুরোটা সময় জুড়ে পৃষ্ঠপোষক করেছিলো, পাকিস্তান যেন পরাজিত না হয়। সেটি সফল করতে সপ্তম নৌবহর পর্যন্তও পাঠিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম কিন্তু হাজার বছরের ইতিহাস। পাকিস্তানের সময়ে সেই ২৩ বছরে, যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তিতে যখন পাকিস্তান ও ভারত যখন বিভক্ত হয় এবং সেটিতে কাম্য নয় এবং সেখানে পাকিস্তান তৈরি হচ্ছে। যেখানে পাঞ্জাবী আছে, সিন্ধির মতো ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তার মানুষ। যার যার সংস্কৃতি ভাষা, সব কিছুকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এবং আমাদেরকে উর্দু চাপিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি হিসেবে আমাদের ভাবতে শেখানো হচ্ছিলো। তখন তরুণ নেতা শেখ মুজিব, বয়স ২৭ বছর। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যদি পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে বাঙালি তার স্বাধীনতা নিয়ে, তার আত্মপরিচয় নিয়ে যদি থাকতে না পারে তাহলে ভারতের পূর্ব উপকূল দিকের যে অঞ্চল, সেই অঞ্চলকে নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ গড়বার জন্য আমি সংগ্রাম করবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কাজেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন হঠাৎ করে আসেনি। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে নতুনভাবে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু পরাজিতরা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা সব সময় চেয়েছিলো এ দেশটি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, যেন বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আমরা যখন কোন কাজ শুরু করতে যাই তখন দেখতে পাই তার গোড়ায় দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ক্ষেত্রটি অনেক আগেই হাত দিয়েছিলেন। মাত্র তিন বছর সাত মাস তিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেই বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।