বদলি চালু: মুমূর্ষু প্রাণে জীবন দান - দৈনিকশিক্ষা

বদলি চালু: মুমূর্ষু প্রাণে জীবন দান

মো. আবু তাহের মিয়া |

‘কপালে তোর নেইকো ঘি, ঠকঠকালে হবে কী?’ ভাগ্যে না থাকলে শত চেষ্টাতেও লাভ হয় না। প্রবাদটি যেনো বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায় প্রযোজ্য। দেশের বেসরকারি ৯৫ ভাগ শিক্ষককের কপাল আর ঠকঠকিয়ে লাভ কী? একে একে সভা, সেমিনার গবেষণা ও কর্মশালা সব চেষ্টাই যেনো বৃথা। বেসরকারি শিক্ষকদের কপাল নয়, যেনো কপাল দোষ। সব পেশায় বদলি আছে। এমনকি এনজিও প্রতিষ্ঠানে বদলি আছে। বদলি চালু আছে পিয়ন, কেরানি ও দারোয়ানদের বেলায়। বদলি নেই মহান পেশা বেসরকারি শিক্ষকদের। মানুষ তথা সমাজ বলে শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ শিক্ষকরা করুণা ও চরম অবহেলার পাত্র। তাহলে কেমন জাতি গড়ে উঠবে তা সহজেই অনুমেয়।

ভাবা যায় কেনো শিক্ষকতা পেশায় বদলি নেই। বরং শিক্ষকদের প্রাণ চঞ্চল ও মুক্ত স্বাধীনভাবে পাঠ দানের জন্য বদলি চালু জরুরি। শিক্ষার্থীদের আনন্দের কথা বিবেচনায় কারিকুলাম পরিবর্তন হয়েছে। আনন্দের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে বলা হয়েছে শিক্ষার রূপান্তর শিক্ষক দিয়ে। কিন্তু শিক্ষকদের চাপিয়ে নিরানন্দে রেখে শিক্ষার রূপান্তর কী করে সম্ভব! আর বিশেষ করে বদলি দরকার বেসরকারি শিক্ষকদের কোনো বাড়ি ভাড়া নেই। স্বল্প বেতন বাড়িভাড়া নিয়ে থাকা সম্ভব নয়। বদলি সময়োপযোগী দাবি বেসরকারি শিক্ষকদের। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতো অপ্রীতিকর ঘটনা, শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা তার প্রায় সবই প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে। একজন বিজ্ঞান মনস্ক শিক্ষক হৃদয় মন্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর দায়ে ১৯ দিন জেল খেটে, কারামুক্ত হয়ে বলেছিলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি চালু কথা। বদলি চালু হলে কোনো শিক্ষক সহজে নির্যাতনের শিকার হবেন না। ভয়ে ভয়ে থাকবেন না। কোচিং বাণিজ্যে সহজেই জড়িত হবেন না। বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবি রয়েছে। তার মধ্যে আর্থিক ও অনার্থিক বিষয় রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি চালুর দাবি আর্থিক কোনো বিষয় নয়। এতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা যথেষ্ট। কেউ মনে করেন বদলি জটিল প্রক্রিয়া। আসলে তা নয়, বরং সহজ প্রক্রিয়া। যারা জটিল মনে করেন তাদের জন্য বলি, ইনডেক্সদারী শিক্ষকদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি হতে পারে সহজ প্রক্রিয়া। এতে সরকারের আয় হবে, শিক্ষকদের বদলির সুযোগ হবে। 

আশার আলো আসে ২২ অক্টোম্বর বদলির প্রথম কর্মশালায়। এরপর দ্বিতীয় কর্মশালায় ১৪ ফেব্রুয়ারি। দুটি কর্মশালায় বদলি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত হয়নি। তবে বলা হচ্ছে বদলি নাকি হবে এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। পরে কমিটি নিয়োগ প্রাপ্তদের। আবারও বৈষম্যের ফাঁদে বেসরকারি শিক্ষকরা। এখানে এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত, কমিটি নিয়োগে বিভক্ত করা হয়েছে। অথচ এনটিআরসি সুপারিশপ্রাপ্ত নিয়োগের পূর্বেই এমপিও নীতিমালায় বদলির কথা বলা হয়েছে। এমনকি আদালতের নির্দেশ রয়েছে সকল শিক্ষকদের বদলির কথা। আমরা আর কোনো বৈষম্য দেখতে চাই না। আমরা চাই সকল শিক্ষকদের বদলি। কে কমিটি নিয়োগ, কে এনটিআরসি সুপারিশপ্রাপ্ত নিয়োগ, কে কমিটি সনদধারী নিয়োগ এগুলো দিয়ে আর কতো বিভাজন! আমরা চাই সর্বজনীন বদলি।

বহুধা বিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার সংকট সর্বত্র। শিক্ষা যেখানে আলো ছড়াবে সেখানে যেনো আর বিশৃঙ্খলা ও হ-য-ব-র-ল এ জর্জরিত। শিক্ষকদের নানাভাবে বিভক্ত করা হচ্ছে, বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায় চরম বৈষম্য ও পার্থক্য তৈরি করা হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ে পাঠদানের ক্ষেত্রে। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নিয়েও বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখানে কে কমিটি নিয়োগ, কে কমিটি সনদধারী নিয়োগ, কে এনটিআরসিএ নিয়োগ তা দেখার বিষয় ছিলো না। এখানে সবাই ইনডেক্সদারী শিক্ষক। সবার পরিচয় এক। সবার বদলির অধিকার রয়েছে।

বদলি চালুর কথা শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন এমনকি প্রতিটা এমপিও নীতিমালায়--১৯৯৫, ২০০৫, ২০১০ ও ২০১৮--বিভিন্ন অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হলেও শিক্ষকদের বদলি আজও চালু হয়নি।  শিক্ষকরা হতাশায় শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন, মানসিক চাপে আছেন, বদলি চালু না থাকায়। ফলে শিক্ষার মান হচ্ছে নিম্মগামী। মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাচ্ছেন না। সুতরাং বদলি চালু কতোটা জরুরি সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু শিক্ষকদের জন্য নয় বরং শিক্ষার মানোন্নয়নে বদলি চালু সময়োপযোগী দাবি। 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, তাড়ল উচ্চ বিদ্যালয় দিরাই, সুনামগঞ্জ

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035099983215332