বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা প্রশাসন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়ার পর এতোদিন বিষয়ের বিপরীতে প্রার্থীরা নিবন্ধিত হলেও আগামীতে সে সুযোগ আর থাকছে না। এবার বিষয় নয়, পদের বিপরীতে নিবন্ধিত হবেন প্রার্থীরা। ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন থেকেই এ পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে। যদিও সব প্রস্তুতি নেয়া হলেও নতুন নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পায়নি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নতুন পদ্ধতির নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে পদের ভিত্তিতে নিবন্ধন পরীক্ষার সিলেবাস প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিআরসিএর পরীক্ষা শাখার এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, খসড়া প্রস্তুত হলেও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে। বিষয়ের বিপরীতে প্রার্থীদের নিবন্ধিত না করে পদের বিপরীতে নিবন্ধিত করতে বলা হয়েছে। তাই নতুন করে আবার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ঢেলে সাজানো হচ্ছে সিলেবাস।
এনটিআরসিএর কর্তারা বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও এ সংক্রান্ত কোনো কারণে এমপিওভুক্তি নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না। এর ফলে বেশ কয়েকটি শিক্ষক-প্রভাষক পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি-ধোঁয়াশা কাটবে। আর যে পদগুলোর শিক্ষক হতে কয়েকটি বিষয়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন তারা পরিষ্কার ধারণা পাবেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি পদের বিপরীতে সিলেবাস প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আরো কিছু অংশ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। অপরদিকে এমপিও নীতিমালা সংশোধনেও কয়েকটি বিভিন্ন ধারার সমপর্যায়ের শিক্ষক-প্রভাষক পদের যোগ্যতায় সামঞ্জস্যতা আসছে। সেগুলোর প্রতিফলন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তিতে থাকবে বলেও আশা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিষয়ভিত্তিক যে সিলেবাসগুলো ছিলো সেগুলোকে পদভিত্তিক করে পরিমার্জন করা হচ্ছে। কিছু পদের সিলেবাস প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আরো কিছু বিষয়ের পাঠানো হচ্ছে। আবার দাখিল মাদরাসার সহকারী মৌলভীসহ আরো কয়েকটি পদের যোগ্যাতায় সামঞ্জস্যতা আসছে বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। পদের ভিত্তিতে নতুন সিলেবাস অনুমোদন হলে ও ওই কয়েকটি পদের যোগ্যাতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরিষ্কার নির্দেশনা এলে আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবো।
নতুন পদ্ধতির সিলেবাস প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনটিআরসিএর পাঠ্যসূচি প্রণয়ন শাখার উপপরিচালক মো. রুহুল কুদ্দুস চৌধুরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভৌতবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানসহ কয়েকটি শিক্ষক পদে কয়েকটি বিষয়ের প্রার্থীরা অংশ নিতে পারেন। যেমন ভৌতবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক হতে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা অংশ নিতে পারেন। তাই আলাদা আলাদাভাবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের বিপরীতে প্রার্থীদের নিবন্ধিত না করে ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে নিবন্ধিত করা হবে। একইভাবে জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক পদের জন্য প্রাণিবিদ্যা বা উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন। এটি এক করে কোনো বিষয়ের জন্য নয়, বরং জীববিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদের বিপরীতে প্রার্থীদের নিবন্ধিত করা হবে। এতে বিভ্রান্তি কাটবে। এ ক্ষেত্রে ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হওয়ার নিবন্ধন পরীক্ষায় পদার্থ ও রসায়ন দুই বিষয় থেকেই প্রশ্ন আসবে। এতে মানসম্মত ও সব দিকে ধারণা থাকা প্রার্থীরা নিবন্ধিত হতে পারবেন।
নতুন পদ্ধতির সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদের জন্য রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান দুটি বিষয়ের প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ পান। এ দুটি বিষয়ে আলাদা নিবন্ধন ও আলাদা মেধাতালিকা। ধরুন পদার্থবিজ্ঞান পদের মেধাতালিকায় ৪০তম অবস্থানে থাকা প্রার্থী ও রসায়নের মেধাতালিকায় ৫৫তম অবস্থানে থাকা প্রার্থী একটি ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান। বাস্তবে দেখা যায়, রসায়নের মেধাতালিকায় ৫৫ অবস্থানে থাকা প্রার্থী পদার্থবিজ্ঞানের ৪০তম অবস্থানে থাকা প্রার্থীর থেকে বেশি নম্বর পেয়েছেন। সুপারিশের জন্য প্রার্থী হিসেবে বেশি নম্বর পাওয়া রসায়ন বিষয়ের প্রার্থী নির্বাচিত হন। তখন পদার্থবিজ্ঞানের মেধাতালিকায় ৪০তম অবস্থানে থাকা প্রার্থী আদালতে গিয়ে রিট করে বলেন তার থেকে পেছনের প্রার্থী সুপারিশ পেয়েছেন। ফলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিলো। নতুন পদ্ধতিতে পদের বিপরীতে নিবন্ধন ও মেধাতালিকা হলে এ জটিলতা কাটবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক নিবন্ধন পদ্ধতি শুরু হয়। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বের আদলে টিচার্স রেজিস্ট্রেশনের এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিলো। সৃষ্টি হয়েছিলো এনটিআরসিএ। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বও ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এনটিআরসিএকে দিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।