দেশের বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এরই মধ্যে টাঙ্গাইলে বন্যাকবলিত এলাকায় ৭২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা চরম হতাশায় রয়েছেন। টাঙ্গাইল প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে ছয়টি এখন বন্যাকবলিত। এর মধ্যে তিন উপজেলার ৭২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ ও আঙিনায় পানি থাকায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ বিষয় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) এ এম জহিরুল হায়াত জানান, বন্যা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই পাঠদান শুরু হবে।
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে। তবে কমেছে করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি। জানা গেছে, এখনো বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ীর জেগে ওঠা এলাকা আবারও প্লাবিত হতে শুরু করেছে। জেলায় পানিবন্দি রয়েছে ৪০ হাজরের বেশি পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। শিশু-বৃদ্ধের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। প্রকট আকার ধারণ করেছে গোখাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদের পানি ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও তা বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি ২২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে হুমকির মুখে পড়েছে ঘাঘট নদের গাইবান্ধা শহররক্ষা বাঁধের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ। বৃষ্টিতে বাঁধের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে ছোটবড় গর্ত ও মাটি ধসে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই থাকা পানি ঘাঘট নদের শহররক্ষা বাঁধে কোথাও কোথাও ধসে গেছে বাঁধের গোড়াসহ ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শহরবাসী।
দীর্ঘ বন্যার কবলে কুড়িগ্রাম, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা : কুড়িগ্রাম : দুই সপ্তাহের বেশি বন্যায় ধুঁকছে কুড়িগ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে নতুন করে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢল বাড়তে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় পাওয়া প্রতিবেদনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, জেলার ভিতর দিয়ে তিন নদনদীর পানি পাঁচ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, উলিপুরের হাতিয়া এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার এবং কুড়িগ্রাম শহরের সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
জামালপুর : জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি দ্বিতীয় দফায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে নতুন করে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ছড়িয়ে পড়ছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে অন্তত ২ লাখ মানুষ। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে এবং এ বৃদ্ধি কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে।