বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগে আগ্রহ কেন চীনের - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগে আগ্রহ কেন চীনের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় আসছে চীনা বিনিয়োগ। আগে থেকেই এই খাতে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ বিনিয়োগ করেছে। নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে আরো বেশি বিস্তার করার উদ্যোগ নিল চীন। উল্লেখ্য, উচ্চশিক্ষায় চীনের সহায়তা আরো আগে থেকেই রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব খবর জানা গেছে। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করাই চীনের লক্ষ্য। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চাইছেন না। তাদের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে আগে চীনের প্রস্তাব আসুক। তারপর বিস্তারিত জানানো হবে। প্রসঙ্গত, আমেরিকা বর্তমানে পিটিআইগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ‘খরচ’ বহন করছে। জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ প্রাথমিক শিক্ষার নানা প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। ভারত সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ মঙ্গলবার সকালের দিকে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে সাক্ষাৎপরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকটি আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হবে। এতে রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে, চীন বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কী করতে চায়। তারপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতের কাছে সারাদেশের ৬৭টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) ভবন নির্মাণ ও আধুনিকীকরণে চীনের সহযোগিতা চাওয়া হবে।

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা এনজিওদের মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষায় বাংলাদেশের সক্ষমতা হয়েছে। তবু বাস্তবতার নিরিখে আন্তর্জাতিক সহায়তায় প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার চেয়ে চীনের নীতি অনেকটা ভালো। তবু

চীনের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অনুদান নিতে হলে শর্ত যুক্ত নয়; শর্তবিহীন অনুদান নেয়া যেতে পারে। তার মতে, অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের দক্ষতা রয়েছে। চীনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, এজন্য চীনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরিতেও চীনের অনুদান নেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘বিস্তার’ নীতিতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে চীন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি, সামরিক এবং শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করলেও প্রাথমিক শিক্ষায় এবারই প্রথমবারের মতো বিনিয়োগের আগ্রহ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনমুখী হওয়ায় বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষমতাধর দেশ বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ভারতও বাংলাদেশকে সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগে চীনের উদ্যোগের খবরে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন চিন্তা বাড়াল। তাদের মতে, দেশের সরকারবিরোধীরা যখন চীনের সাহায্য পেতে ইঁদুর দৌড় শুরু করেছেন ঠিক সেসময় বাংলাদেশের শিক্ষায় চীনের বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ নিয়ে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, শি জিনপিংয়ের চীন বাংলাদেশ সরকারের পাশে রয়েছে।

ভূ-রাজনীতির কৌশল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীন যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছে তাতে উদ্বিগ্ন আমেরিকার বাইডেন সরকার। গত কিছুদিন ধরে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন তখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে ইউরোপের একটি অংশ চীনের দিকে হেলে পড়েছে। আর ঠিক ওই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শিক্ষায় চীনা বিনিয়োগের আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ সরকার চীনকে আরেকটু কাছে নিয়ে মোক্ষম চাল দিয়েছে। বাংলাদেশের এমন কূটনৈতিক চালকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে ভারত সরকারও। শিক্ষায় চীন-বাংলাদেশের নয়া সম্পর্ক নিয়ে দেশ দুটির আরো কাছাকাছি আসাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি নেপালের চীনমুখী হওয়া এবং বাংলাদেশের শিক্ষায় চীনের সাহায্যের খবর ভারতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করেন কূটনৈতিকরা।

জানতে চাইলে কূটনৈতিক বিশ্লেষক মুন্সী ফয়েজ আহমদ  বলেন, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় চীন আগে থেকেই সহায়তা করছে। প্রাথমিক শিক্ষায় হয়তো এবার প্রথম। কিন্তু এটাকেই লোকে নানাভাবে উচ্চসিত হয়ে অনেক কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে। চীনকে নিয়ে নির্দোষ একটি বিষয়ে এমন পরিকল্পনা খোঁজা ঠিক নয়। খামোখা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, চীনতো আমেরিকা নয়। বন্ধুত্বের মাধ্যমে চীন প্রভাব বিস্তার করে। উল্টোদিকে আমেরিকা জোর করে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় চীনের সহায়তায় মনে হয় বাংলাদেশ লাভবান হবে। তবে এ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন চিন্তার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না।

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035898685455322