বাংলাদেশ, জাপান, ভারতের ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট হলে ‘হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর : বাংলাদেশ, জাপান, ভারতের ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বে নতুন সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এবং ভারতের এশিয়ান কনফ্লুয়েন্সের নির্বাহী পরিচালক সব্যসাচী দত্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এনএসইউর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এম জসিম উদ্দিন এবং এনএসইউর এসআইপিজির অধ্যাপক শহীদুল হক।
জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই অংশীদারিত্ব বিনিয়োগ, বাজার উন্নয়ন এবং উন্নত সংযোগের দিকে মনোনিবেশ করবে, ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং জাপানের মূলধন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি জাপানকে আঞ্চলিক সমৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাপানি বিনিয়োগ সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ, জাপান ও ভারতের অংশীদারিত্ব উন্নত যোগাযোগ, বাণিজ্য দক্ষতা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অধিকতর স্বচ্ছতা, কাস্টমসের ডিজিটাইজেশন এবং নন-ট্যারিফ বাধা অপসারণের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. রায়হান অর্থনৈতিক সংহতি ও শিল্প প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবাধ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরামর্শ দেন।
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল (এনইআর) ভারত এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী উল্লেখ করে মি: দত্ত বলেন, এ অঞ্চলে ব্যাপক সংযোগ একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।
সীমান্ত স্থিতিশীলতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপসহ ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা দরকার সে বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে জাপানের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়।
সিপিএস ও এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক ড. তৌফিক এম হকের সঞ্চালনায় একটি উন্মুক্ত সংলাপের সময় প্যানেলিস্টরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগ অংশীদারিত্বের ফলে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানসহ সমগ্র অঞ্চলের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।