শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ আমদানি করতে চায় ভারত। বাংলাদেশও রপ্তানির অনুমতি দেবে। ইতোমধ্যে দেশের শতাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও করেছে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে। উল্লেখ্য, আগামী অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হবে দুর্গাপূজা।
সূত্রের খবর, গত বছর ভারতে মোট ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রপ্তানি হয় ১ হাজার ৩শ টন। অনেক প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনপ্রাপ্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি করতে পারেনি। মাছ রপ্তানির বিষয়টি মূলত কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ল তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। এ কারণে এবার রপ্তানির সময়সীমা বাড়িয়ে ৬০ দিন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রতিবেশী দেশটির তরফে।
কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ইলিশ আমদানির অনুমোদন পেতে গত ১ সেপ্টেম্বর সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে একটি চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর পূজা উপলক্ষে ২ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও মাত্র ১ হাজার ৩ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর তারা ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ থেকে। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। উপ-হাইকমিশনের প্রথম সচিব শামসুল আরিফ চিঠিতে লিখেছেন, গত চার বছরের মতো এ বছরও কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ইলিশ আমদানির অনুমতি চেয়েছে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ আমদানির অনুমতি দেওয়ার অনুরোধও করা হয় চিঠিতে।
কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ গতকাল বলেন, গত বছর রপ্তানির সময়সীমা কম থাকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানি করতে পারেননি। এবার যেন সময়সীমা বাড়িয়ে ৬০ দিন করা হয়। আর রপ্তানির পরিমাণ ৫ হাজার টন করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার যেন ব্যবস্থা নেয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে।
জানা গেছে, গতবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেনি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেনি। মাছ রপ্তানির বিষয়টি মূলত কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ল সেটির ওপরও অনেকটা নির্ভর করে। তাই এবার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দেওয়া হবে। ইলিশ রপ্তানির শর্তে বলা হয়েছিল, রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪-এর বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে, শুল্ক কর্তৃপক্ষ দ্বারা রপ্তানি করা পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করাতে হবে। প্রতিটি কনসাইনমেন্ট শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র রপ্তানি-২ অধিশাখায় দাখিল করতে হবে, অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ পাঠানো যাবে না।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আবদুর রহিম খান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে কী পরিমাণ অনুমোদন দেবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি। অনেকেই আবেদন করেছেন, সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করা হবে। সেখান থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈঠক করে তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে। ১০ শতাংশ মিয়ানমারে, ৫ শতাংশ ভারতে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ বিশে^র অন্যান্য দেশে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চিরদিনের জন্য স্থান পায় বাংলার ইলিশ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার আশপাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে এ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখা নদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।