গাজীপুরে মহানগরের কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ এলাকায় দুই ছেলের হামলায় আহত হওয়ার দুইদিনের মাথায় বাবা ওসমান গণি (৭০) নিহত হয়েছেন। গত সোমবার তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে সফিকুল ইসলামের মামলা দায়েরের পরে মঙ্গলবার দুপুরে অপর দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত ওসমান গনি গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ হাবিব মার্কেট এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে গ্রেফতার হওয়া দুই ছেলে হলেন শরিফুল ইসলাম (৩০) ও মাহবুবুল ইসলাম (৩৪)।
জানা যায়, নিহত ওসমান গনির মাদকাসক্ত ছোট ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩০) মাদক সেবনের জন্য বিভিন্ন সময়ে তার বড় ভাই সফিকুল ও তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা চাইতো। টাকা না পেলে পরিবারেরে লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়াতো। গত শনিবার বাবার কাছে কিছু টাকা দাবি করে সে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করেন ওসমান গণি। পরে ওইদিন রাত পৌনে ১১ টার দিকে সারদাগঞ্জ রাইস মিলের পাশে হাবিব মার্কেটের সামনে ছেলে শরিফুল ইসলাম তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। এসময়ে সেখানে গিয়ে শরিফুলের কাছে তার বাবা ওসমান গনি জানতে চান কেনো সে ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এ নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মাদকাসক্ত ছেলে শরিফুল ও অপর ছেলে মাহবুব ইসলাম লাঠিসোটা নিয়ে ওসমান গণিকে মারধর শুরু করেন। এসময় লাঠি দিয়ে আঘাত করতে গেলে ওসমান গণির বাম চোখে জখম হয়। পরে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে তারা পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিওতে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে গত সোমবার রাতে স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আনার পর রাত দুইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে কাশিমপুর থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড় ছেল সফিকুল ইসলামের স্ত্রী আইনজীবী রোমানা সফিক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গাজীপুর শহরের বসবাস করি। তাকে গত সোমবার দিবাগত রাতে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে আসার পর রাত আনুমানিক ২ টার দিকে তার মৃত্যুর সংবাদ পাই।
সফিকুল ইসলাম জানান, ছোট ভাই শরিফুল বেকার, সে স্থানীয় মাদক সেবীদের সঙ্গে মেলামেশা করার পর সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি মাদকের জন্য টাকা না দেয়ায় চুরি করে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই সে তাকেসহ তার বাড়ির লোকজনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধোর করে। শনিবার রাতে বাবাকে শরিফুল ও মাহবুব দুইজনে মিলে মারধোর করেছিল। সেদিন লাঠির আঘাতে ওসমান গণির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
কাশিমপুর থানার ওসি সৈয়দ রাফিউল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে নিহতের বড় ছেলে সফিকুল ইসলামের মামলা দায়েরের পর দুপুরে তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।