দৈনিক শিক্ষাডটকম, যবিপ্রবি : বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাত্রী তুলে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তা শাহেদ রেজার বিরুদ্ধে। তারেক মাহমুদ (পিয়াস) নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা যবিপ্রবি উপাচার্য বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য।
অভিযোগপত্রে তারেক বলেন, আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। চাকরি সূত্রে আমার ঢাকাতে থাকা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বৃহস্পতিবার) অফিস শেষে আমি যশোরের উদ্দেশে রওনা হই। যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় পাড় স্টপেজে পৌঁছালে, সেখানে দেখতে পাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি বাস। বাস থেকে 'নড়াইল-যশোর, নড়াইল-যশোর' বলে যাত্রী ডাকা হচ্ছে। আমি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, রেজা নামের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন 'পরে দেখা যাবে আগে ওঠেন'। আমি ও আমার এক সহকর্মী বাসে উঠি। সন্ধ্যা ৭টা ২০ এর দিকে ৩০-৩৫ যখন যাত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় বাস স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায় বাসটি। এরপর প্রত্যাশা পর্যন্ত প্রতিটি স্টপেজে যাত্রী নেয় রেজা নামে ওই কর্মকর্তা। পদ্মা সেতুতে ওঠার সময় বাসে যাত্রীতে ছিল পূর্ণ।
এরপর ইমরান নামের এক স্টাফ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া ওঠানো শুরু করে। আমাদের কাছ থেকে আদায় করার সময় আমরা দুজন ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। উনি আমাদের বলেন, নরমাল ভাড়া ৬৫০ টাকা, তাকে আরও ৫০০ টাকা দেওয়া লাগবে। কথাবার্তার একপর্যায়ে উনি অকথ্য ভাষায় গালি দেন। আমি নিজের সম্মান রক্ষার্থে তখন তাকে আরও ৪০০ টাকা ভাড়া দেই।
আমি আমার পরিচয় দিয়ে তার নাম জানতে চাই, উনি নাম না বলে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং আমাকে বলেন 'কার কাছে নালিশ দিবি?' এরপর ড্রাইভারকে বলেন বাস থেকে নামিয়ে দিতে। আমি তার সাথে একমত হয়ে বলি 'ঠিক আছে আমাকে ভাঙা নামিয়ে দিবেন।' কিন্তু নামায় দেওয়ার সময় তিনি আমাদের থেকে নেওয়া ভাড়া ফেরত দিবেন না। পুরো টাকাটাই রেখে দিবেন। এরপর যথারীতি ভাঙ্গা, মোকসেদপুর, ভাটিয়াপাড়া, নড়াইল প্রত্যেকটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে ডাক দিয়ে যাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। মোট ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী পরিবহন করে নিয়ে এসেছেন। সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে ব্যবসা এবং নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাধারণ জনগণের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় ইঞ্জিনিয়ার রেজা এবং মেকানিক ইমরানের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহেদ রেজা বলেন, ধোলাইপাড় থেকে আমার নিজের আপন বড়ভাই ও তার ছেলেমেয়ে বাসে নেওয়ার জন্য আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় তারা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। এরপর আমি তাদের বাসে তুলি। তাদের বাসে ওঠার সময় স্ট্যান্ডের লোকজন ঝামেলা করে ২০০ টাকা দাবি করে। তাদের কাছে ভাংতি টাকা নেই বলে আমাকে টাকা দিতে বলেন। আমি তাদের হয়ে ২০০ টাকা দিয়ে দেই স্ট্যান্ডের লোকদের। পরবর্তীতে বাসে ওঠার পর তারা কোন বিভাগের শিক্ষক জানতে চাইলে বলেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কেউ না, তাঁদের বড়ভাই এখানে চাকরি করেন। এরপরে তারা কেন মিথ্যা কথা বললেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমাকে আমার পরিবারের সামনে অপদস্থ করে এবং চোর-বাটপার বলে আখ্যায়িত করে।
বাসে যাত্রী তোলার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাসে ৩০ জনের মতো যাত্রি ছিল এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের আপন বড়ভাইসহ ৫-৭ জন তাবলিগ থেকে আসছিলেন তাদের নিয়ে এসেছি। আমার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছিল। আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি, আমার নিজের বড়ভাই ও তাবলিগের লোকজন ড্রাইভারদের খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয় কিন্তু আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি।
এ বিষয়ে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. জাফিরুল ইসলামকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে, আমি বিষয়টি নথিভুক্ত করার জন্য পরিবহন প্রশাসক ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, যদি অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা আসলেই এমন কোনো কাজ করে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই গর্হিত একটি অপরাধ। যদি এমন কোনো কিছুর প্রমাণ আমরা পাই তাহলে আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে বাবস্থা নেওয়া হবে।