তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০১৩-১৪ খ্রিষ্টাব্দে খালেদা জিয়া আর এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এ আগুনসন্ত্রাস চলছে। কেউ কেউ ওদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বিবৃতি দেয়। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হয় না। তাদেরকে নির্মূল করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। জনগণের রায়ে আমরা যদি সরকার গঠন করতে পারি, শেষ আগুনসন্ত্রাসীকে নির্মূল করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এদেরকে নির্মূল করা না গেলে দেশে শান্তি স্থাপন করা যাবে না।
শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক মানুষ পোড়ানোর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে’ মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমি প্রশ্ন করেছি, পৃথিবীর কোথাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পেট্রোল বোমা-মানুষ হত্যা হচ্ছে কিনা। তারপর তিনি স্বীকার করেছে, গত বিশ বছরে পৃথিবীর কোথাও এরকম কিছু ঘটেনি।
তিনি বলেন, এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি যারা করে এরা দেশ জাতি সমাজের শত্রু। এদের মূলোৎপাটন করতে হবে। এদের অর্থদাতা হুকুমদাতা, মদদদাতাদের ধরতে হবে। তাদের বিচার করতে হবে। যারা শুধু গিয়ে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করছে তাহলে এটি বন্ধ হবে না। বিএনপি জামায়াত নেতাদের অর্থে, হুকুমে, মদদে এ হত্যা চলছে। এদের বিচার না হলে এই আগুন সন্ত্রাস বন্ধ হবে না।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির কাছে প্রশ্ন, এই মানুষের আর্তনাদ কি আপনাদের কানে পৌঁছায় না? আসলে কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন বিএনপি-জামায়াতও কখনও ভালো হবে না। সুতরাং এদের নির্মূল করতে হবে।
মানববন্ধনে অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ সংগঠনের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় ২০১৩-১৫ খ্রিষ্টাব্দে পেট্রোল বোমায় আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
খোকন মিয়া নামে একজন বলেন, গত ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি গুলিস্তান থেকে বাসে যাওয়ার পথে কাজলা রোডে আমাদের ওপর পেট্রোল বোমা মারে। কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে ঢামেকে আসি। আমি বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
অগ্নিদগ্ধে নিহত আলমগীর হোসেন শিমুলের সন্তান জাফর হোসেন বলেন, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ অক্টোবর আমার বাবার গাড়ির ওপর পেট্রোল বোমা মারে। তারপর তাকে হত্যা করা হয়। আমাদের মাথার ছায়া নাই দশ বছর, অথচ হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ মানবতার কথা বলে বিএনপি, আমাদের মানবতার বিচার কে করবে।
লিটন মিয়া বলেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। চানখারপুল থেকে লেগুনায় ওঠার পর ককটেলের বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা ১৩ জন আহত হই। গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আমরা তো রাজনীতি করি না, আমার কী অপরাধ ছিল। আমাদের দোষ, আমরা খেটে খাই। এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিচার হয়নি। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
পেট্রোল বোমায় স্বামী-সন্তান হারানো মাশরুহা বেগম বলেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে স্বামী ও কোলের শিশু মাইশা নাহিয়ানকে নিয়ে বাসে যাচ্ছিলাম। পেট্রোল বোমায় চলন্ত বাসে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। আমার স্বামী ধাক্কা দিয়ে আমাকে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু চোখের সামনে স্বামী ও সন্তানকে হারাই। আমার বেঁচে থাকা দুঃস্বপ্নের মত, এটা কে কি বেঁচে থাকা বলে? এভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারবেন না, এভাবে পরিবারকে পঙ্গু করে মারবেন না।
এ ছাড়া জমির আলী, জাহেদুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদসদস্য অ্যাডভোকেট খাদিজা নাসরীন, নিহত নাহিদের মা রুনী বেগম, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন।
এ সময় সংহতি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, হত্যা সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে, খালেদা জিয়া একই কাজ চালিয়ে গেছে এখনও একই প্রক্রিয়া তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের রক্তে সন্ত্রাস মিশে আছে। তারা দেশকে আবার পাকিস্তানি তালিবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে ভবিষ্যতে নতুন আইন করা ও ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ২০১৩-১৪ খ্রিষ্টাব্দে জামায়াত বিএনপির সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থার আওতায় আনার দাবি জানান।