সুপ্রিমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য বিচারপতি বজলুর রহমান ছানার ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা স্মৃতি পরিষদ তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে। তার স্মরণে রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষ লাশ দাফনের জায়গা পাচ্ছিলো না। সেসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থাকা বজলার রহমান ছানা তৎকালীন পানিমন্ত্রীকে এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করিয়ে দেন। যার সুফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ পাচ্ছে। দায়িত্বের প্রশ্নে যেমন শতভাগ ছিলেন, নীতির প্রশ্নেও ছিলেন আপোষহীন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জকে রক্ষার করার জন্য তাঁর ভূমিকার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হয়।
বজলুর রহমান ছানা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবাবগঞ্জ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। মেধাবী ছাত্র বজলুর রহমান ছানা ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ থেকে জুরিসপ্রুডেন্স বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে একই বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সমাজ বিজ্ঞানে বিভাগ থেকেও তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা বজলুর রহমান ছানা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তৎকালীন নবাবগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ ও আশির দশকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া রাজশাহী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৭৯-৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বিশেষ সামরিক শাসনামলে সামরিক আদালতে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন যদিও পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।তিনি ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে থেকে প্রায় ১৫ বছর ঢাকার ধানমন্ডি ল’ কলেজে আইনের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার জজ কোর্ট এবং ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে তিনি প্রচুর সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।