বিদ্যালয়ের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে আনিস-মাসুদ - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যালয়ের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে আনিস-মাসুদ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম |

বিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার অনুসারী দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই দুই যুবলীগকর্মী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে আনিসকে (৩৫) বাড়ির অদূরে নগরের অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় এবং মাসুদ কায়সারকে (২৮) হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার বাড়ির কাছে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত দুজনই হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পক্ষ জামায়াতপন্থি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগ দেয়। সেই পক্ষটির দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত আনিসের স্ত্রী এ্যানি আক্তারের দাবি, আনিস ও কায়সার খুনে স্থানীয় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, আরমান ওরফে ডবল হাজী, জাহাঙ্গীর ও মো. হাসান জড়িত। এ চারজনও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়াইশ বুড়িশ্চর সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনাকে কেন্দ্র করে ইউনুচ গণি চৌধুরীর অনুসারী দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এদের এক পক্ষে ছিল হত্যাকা-ের শিকার আনিস ও কায়সার। আরেক পক্ষে ছিল সাজ্জাদ, আরমান, জাহাঙ্গীর ও হাসান।

বিদ্যালয়ে পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে প্রধান শিক্ষক নন্দন বড়ুয়ার পদত্যাগ দাবি করে আনিস ও মাসুদ কায়সার পক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু সাবেক ও বর্তমান ছাত্র প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাদের ১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কায়সার হৃদয় নামে সাবেক এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যে আনিস ও মাসুদ কায়সারের ভূমিকা ছিল বলে মনে করে প্রতিপক্ষের সাজ্জাদ ও আরমানরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, হৃদয়কে মারধরের ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। পারিবারিক সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনিস ও মাসুদ কায়সারকে দুপুরের ঘটে যাওয়া ঘটনা সুরাহার কথা বলে বাড়ির অদূরে অন্যন্যা আবাসিক এলাকায় ডেকে নিয়ে খুন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস শুক্কুরের দাবি, মূলত কুইয়াশ বুড়িশ্চর সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব থেকে আনিস ও মাসুদ কায়সারকে খুন করা হয়েছে।

জানা গেছে, নিহত আনিস হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ হাজী ওসমান আলী মেম্বার বাড়ির মৃত মো. ইছহাকের ছেলে। তারা দুই ভাই এক বোন। আনিস বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। জমিজমা ও পোলট্রি ব্যবসা করতেন তিনি। নিহত মাসুদ কায়সার বোয়ালখালী উপজেলার মো. রফিকের ছেলে। তিনি বেঁচে নেই। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে কায়সার সবার বড়। তার মাও বেঁচে নেই। শৈশবকাল থেকে তারা পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার নানার বাড়িতেই লালিত-পালিত হয়েছেন।

জোড়া খুনের এ ঘটনায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এবং জেলার হাটহাজারী থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে পুলিশ কর্মকর্তা ফিরোজ জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকা-ে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আনিসের এ্যানি আক্তার অভিযোগ করে বলছিলেন, ‘আমার স্বামীকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী আরমান ওরফে ডবল হাজী, সাজ্জাদ, জাহাঙ্গীর ও হাসান পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।’

মাসুদের নানি সায়েরা খাতুন কান্না করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার নাতিকে মোবাইলে কল করে খুনিরা ডেকে নেয়। আমার বাড়ির কাছেই নাতিকে খুন করেছে সন্ত্রসীরা। আমি তাদের বিচার চাই।’

কুয়াইশ বুড়িশ্চর সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নন্দন বড়ুয়া বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে একটি পক্ষের মধ্যে হয়তো দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে। সেই পক্ষটি আমার ওপর অসন্তুষ্ট। আমি এই স্কুলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছি।’

মামলা দায়ের : মাসুদ কায়সার হত্যার ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হাটহাজারী থানায় গতকাল সন্ধ্যায় একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, নিহত মাসুদের ছোট ভাই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

একই ঘটনায় নিহত মোহাম্মদ আনিসের পরিবারেরও রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করার কথা। ওসি সঞ্জয় কুমার সিংহ এ তথ্য জানিয়েছেন।

অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032551288604736