বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিলের সুপারিশ - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিলের সুপারিশ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কারিগরি জ্ঞানের অভাব, অনভিজ্ঞ সিদ্ধান্ত, ভুল ও অদূরদর্শী সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালাসহ আরও কিছু কারণে দেশের বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি; এমন তথ্য উঠে এসেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে তৈরি করা ওই প্রতিবেদন বলছে, সমস্যার সমাধানে মেধাবী, দূরদর্শী, ভবিষ্যৎমুখী স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দরকার।

আইএমইডির প্রতিবেদনে পিডিবি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো), টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা), ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি), পাওয়ার সেল, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)-সহ বিভিন্ন সংস্থা ২০১৩ সাল থেকে নেয়া ৬৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতিকে ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করে আইএমইডি বলেছে, ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন মাত্র ১০ শতাংশ। প্রথম বছরে কোন প্রকল্পেরই অগ্রগতি হয়নি।

দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘মডেল অব লুটিং (লুটেরা মডেল)’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার গচ্চা গেছে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, সেটারই আনুষ্ঠানিক নাম ক্যাপাসিটি চার্জ।

আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, ক্যাপাসিটি চার্জের বর্তমান মডেল কোনভাবেই টেকসই নয়। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ আসবে না- এমন দাবিও মিথ্যা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে স্থানভেদে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা রাখা এবং সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে এক-চতুর্থাংশ বা অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তা দেবে- এ দুটি শর্তই যথেষ্ট; সঙ্গে সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টিও থাকবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার মোট যা লোকসান করেছে, তার চেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে গত দুই অর্থবছরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর কারণ, জ্বালানি ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়।

আইএমইডি বলছে, ইউনিটপ্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ; স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি ক্রয়; সহজে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি এবং শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান নেই।

‘২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি’ নামে বিশেষ আইন করে সরকার। আইনটি দায়মুক্তি আইন নামেই বেশি পরিচিত।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ আইন বিদ্যুৎ খাতে লোকসান বয়ে আনছে। দায়মুক্তির সুযোগ দেয়া এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জসহ হিসাব করলে দেখা যায়, কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি বার্ষিক গড় মূল্য ১০০ টাকাও ছাড়ায়। মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করা হয় বলে এতে পিডিবির লোকসান থামানো যাচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তায়ন থামানো জরুরি।

আইএমইডি বলছে, কারিগরি জ্ঞানহীন ও অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপক ভুল ও অদূরদর্শী সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা এবং আইনি প্রক্রিয়ার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে অযোগ্য করে রেখেছে; বিশেষ করে চীন ও ভারতীয় সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাত এখন বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি। এসবের সমাধানে দরকার মেধাবী, দূরদর্শী, ভবিষ্যৎমুখী স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039989948272705