মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ডুলুছড়া এলাকার বালিশিরা পাহাড় ব্লকের শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে পোহাতে হয় ঝক্কিঝামেলা। কখনো জঙ্গল মাড়িয়ে, গাছের চাড়ে (সাঁকো), আবার কখনো পাহাড়ি ছড়ার পানিপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয় ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া যেন যুদ্ধ জয় করা। আর প্রবল বৃষ্টিতে ছড়ায় ‘গোলা’ আসলে সেদিন আর স্কুলে যাওয়ার উপায় থাকে না। অন্যদিকে একই রাস্তার উপরিভাগ ভাঙা থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণের ঘরে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, গ্রামের মানুষকেও কষ্ট করে এ পথ দিয়ে যেতে হয় শহরে বা জুমে। ওই ভঙ্গুর পথই এখানকার অসংখ্য লেবু, আনারসসহ অন্যান্য ফসলাদি পরিবহনের একমাত্র রাস্তা।
এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর ১১৩টি বাড়ি। এসব বাড়ির বাসিন্দাদেরও চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। তাদের সন্তানদেরও ভর্তি করতে হবে ডুলুছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে একদল শিশু ওই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। আশ্রয়ণের পাশের রাস্তাটির তিনটি স্থান ভাঙা। একটিতে গাছের টুকরা দিয়ে এপার-ওপার সংযোগ করা। ওই ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মনি আক্তার। ছেলেরা হাতল ছাড়া ওই গাছ দিয়ে পার হলেও মনি ভয়ে পার হচ্ছে না। পরে শিক্ষার্থী ইয়াছিন, রুহিন ও হাসিবুল আবার অপর প্রান্তে গিয়ে মনিকে ধরে সরু গাছ দিয়ে পার করায়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এ রাস্তা এখানে আর কী দেখছেন, একটু কষ্ট করে সামনের অবস্থাটা দেখে আসুন।
কোমলমতি শিশুদের সঙ্গে কিছুটা সামনে এগিয়েই দেখা মিলল এ রকম আরও একটি ভাঙন। সেখানেও গ্রামবাসী এমন বিকল্পব্যবস্থা করেছেন। এর পর সরু সড়ক দিয়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর নেমে যেতে হয় পাড়াড়ি ছড়ায়। ছড়ার পানি মাড়িয়ে প্রায় দেড়শ গজ অতিক্রম করে আবার ডাঙ্গায় উঠতে হয়। ডাঙ্গার পথও সরু, দুই পাশ ঘনজঙ্গলে আবৃত। এ রাস্তা দিয়ে সামনে এগোতে ভয় লাগে। এরই মধ্যে পেছনে আসা মাসুদ মিয়ার পায়ে দুটি জোঁক কামড় বসিয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক অর্জুন দত্ত জানান, তাদের বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পাহাড়ি জনবসতির। বর্তমানে বিদ্যালয়ের তিন দিকের রাস্তা ভালো। শুধু ডুলুছড়া অংশে (পাহাড় ব্লক) রাস্তা না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে খুবই কষ্ট হয়। রাস্তা নির্মাণ হলে বিদ্যালয়ের উপস্থিতি আরও বাড়বে।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহিন মিয়া জানায়, প্রতিদিনই তাদের এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। মাঝেমধ্যেই পড়ে গিয়ে কাপড় ও বইপত্র ভিজে যায়।
৩য় শ্রেণির ইয়াছিন জানায়, স্কুলে আসার পর ছড়ার গোলা আসলে অটোরিকশায় লাউয়াছড়া রাস্তায় ঘুরে বাড়ি যেতে হয়। আর বাড়িতে থাকতে গোলা আসলে ওই দিন স্কুলে আসা হয় না।
লেবুবাগানের মালিক শ্যামল দাশ জানান, রাস্তা ভাঙা থাকায় তার বাগানের লেবু, আনারস শহরে পাঠাতে খুবই কষ্ট, ডাবল খরচ হয়। এ জন্য তিনি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া রুনা বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালান। এখানে রাস্তা ভালো না হলে তিনি রিকশা নিয়ে ঘর পর্যন্ত আসতে পারবেন না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার জানান, বর্ষায় এ রাস্তাটির কয়েক জায়গা ভেঙেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হবে। ইতোমধ্যে প্রস্তাব ওপরে পাঠানো হয়েছে। কালভার্টসহ আরসিসি ঢালাই দিয়ে রাস্তা হবে।