লিওনেল মেসির কাঁধে ছিল প্রত্যাশার পারদ। অসাধারণ ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত সমাপ্তি, ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর সঙ্গে থেমে যাওয়া আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিদের স্বপ্ন পূরণের ভার ছিল তার ওপর। জোড়া গোল করে নিজের কাজটা তিনি করেছেনও। কিন্তু রঙ জমা ম্যাচে কামব্যাকের গল্প লিখেছেন একজন ফ্রান্সম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার হ্যাটট্রিকে ১২০ মিনিটের ম্যাচ ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ হয়। টাইব্রেকারের লড়াইয়ে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মেসির আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের অধিকাংশ সময় নিয়ন্ত্রণ করে আর্জেন্টিনা। ২৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে প্রথম লিড এনে দেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্স তাদের বক্সে ডি মারিয়াকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আলবিসেলেস্তেরা। এরপর ৩৬ মিনিটে দুর্দান্ত এক কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করে রাশিয়া বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন্স ফ্রান্সকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ধাক্কা খাওয়া ফ্রান্স সুবিধা করতে পারেনি। ম্যাচের ৮০ মিনিটে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু পায় লেস ব্লুজরা। কোলো মুয়ানিকে ফাউল করেন আকাশি-সাদার ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি। পেনাল্টি থেকে বল জালে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে। এক মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোল করেন ২৩ বছরের তরুণ এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের পাস ধরে জোরের ওপর শটে জালে পাঠিয়ে দেন তিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ওই ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানেও আর্জেন্টিনার বাজিমাত। বদলি নেমে লওতারো মার্টিনেজ একের পর গোল মিস করছিলেন। এর মধ্যে ত্রাতা হয়ে আসেন লিও মেসি। তিনি ১০৮ মিনিটে বক্সের মুখ থেকে নিজের নার্ভ ধরে রেখে দারুণ এক গোল করে দলকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন।
আর্জেন্টিনা তখন শিরোপা ছোঁয়া দূরত্বে। লুসাইল স্টেডিয়ামের ভরা গ্যালারি গর্জে উঠেছে। মেসি তাদের আরও উল্লাসের ইঙ্গিত করেন। কিন্তু ফ্রান্স আবারও কামব্যাক করে। শেষ বাঁশির পাঁচ মিনিট আগে আবার গোল করেন এমবাপ্পে। তার শট বক্সে থাকা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পরে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে রেকর্ড গড়েন। ম্যাচ ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ করেন।
এরপর শুরু হয় টাইব্রকারের লড়াই। সেখানেও শুরুর শট জালে পাঠিয়ে দেন তরুণ এমবাপ্পে। কিন্তু বাজপাখি খ্যাত আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজের সামনে পড়ে ফ্রান্সের কিংসলি কোম্যান ও তরুণ অঁরেলিন চুয়ামেনি শট মিস করেন। অন্যদিকে চারটি শট নিয়েই দারুণ দক্ষতায় জালে পাঠিয়ে দেন আর্জেন্টিনার মেসি, দিবালারা। উল্লাসে ভাসেন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে যান লিওনেল মেসি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যেন ‘গ্রেট অব অল টাইম’ বিতর্ক থামিয়ে দেন। অন্যদিকে ইতালি ও ব্রাজিলের পর টানা দু’বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভাঙে লেস ব্লুজদের।