বিশ্বে বাংলাদেশিদের আশ্রয় প্রার্থনা ৮৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৯০০ জনে। তাঁদের নতুন আবেদনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ নিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস ফোর্স ডিসপ্লেসমেন্ট ইন ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
করোনার মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় স্বল্প আয় ও অনানুষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্তরা চাকরি ও উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন। ৭৭ শতাংশ পরিবারে করোনার কারণে গড় মাসিক আয় কমেছে। এ সময়ে ৩৪ শতাংশ পরিবারের কেউ না কেউ চাকরি বা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন। এরপর এসেছে ইউক্রেন সংকটের খড়্গ। এ সময়ে আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি তরুণ-তরুণীদের বড় সংখ্যা বর্তমানে বেকার। আর যাঁরা আবারও চাকরিতে যোগ দিতে পেরেছেন তাঁদের আগের চেয়ে আয় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। জাতিসংঘ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষণাপত্রে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
ইউএনএইচসিআরের প্রকাশিত হিসাব বলছে, শুধু ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৮ জন বাংলাদেশি বিভিন্ন বিভাগে নিবন্ধন করেছেন। শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী, উদ্ধার হওয়ারসহ জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার বিভিন্ন ভাগে বাংলাদেশিরা আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। বর্তমানে এ বিশাল সংখ্যক বাংলাদেশি ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বে শরণার্থী হিসেবে ২২ হাজার ৬৭২ জন এবং আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন ৬৫ হাজার ৪৯৫ জন বাংলাদেশি।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন বাংলাদেশি নিজেদের শরণার্থী দাবি করে জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছেন। আর ৬৪ হাজার ৬২৪ জন নিজেদের আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইউএনএইচসিআরের কাছে নিবন্ধিত হয়েছেন। ৩৪ জন বাংলাদেশি শরণার্থীর মতো পরিস্থিতিতে এবং ৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৭১ জন অন্যান্য বিভাগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কাছে নিবন্ধিত হয়েছেন।
সংস্থাটির তথ্য নিয়ে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএনএইচসিআরের আগের বছরগুলোর তথ্যের সঙ্গে এ বছরের তথ্যের তারতম্য দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হতে পারেন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের যেসব বাংলাদেশি আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, তাঁদের আবেদন একবারে নতুন। একই বছর শরণার্থী, নতুন আবেদনকারী, উদ্ধার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীসহ বিভিন্ন বিভাগে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৯৪৯ জন। সেখান থেকে হিসাব করে বলা হয়েছে নতুন আবেদনকারী ৮৮ শতাংশ বেড়েছে।
তবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউএনএইচসিআরের কাছে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন ৫৭ হাজার ৯৩৩ জন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৭৯ হাজার ৯০০ জন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮৫ হাজার ৩৬ জন এবং ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ৩৯ হাজার ৭৯৬ জন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে শরণার্থী সংস্থার কাছে নিবন্ধন করিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশিদের সিংহভাগ ইউরোপের দেশে প্রবেশ করে হয় শরণার্থী অথবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকেন। আর ইউরোপের দেশে প্রবেশের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেন। এদের অনেককে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। তখন তাঁদের উদ্ধার হওয়া বিভাগে দেখানো হয়।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে থাকে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, একবার চার বাংলাদেশি অনাপত্তিপত্র নিতে এলে নথি পর্যাপ্ত ও সন্তোষজনক না থাকায় তাঁদের আবেদন খারিজ করা হয়। এর কিছুদিন পরই তাঁদের তুরস্ক থেকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে তাঁদের ফেরত নিয়ে আসতে হয়। মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র ছাড়া তাঁরা বারবার কীভাবে দেশের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেন এটাও বড় প্রশ্ন।