বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া - দৈনিকশিক্ষা

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: খবরে প্রকাশ, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আবরার ফাহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে বুয়েটের একটি হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সবাই ছিলেন ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার নেতাকর্মী। এ ঘটনায় করা মামলার রায় হয় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ওই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে এবং কোনো ছাত্র সংগঠনই সেখানে সক্রিয় হয়নি। তবে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পর থেকেই বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। দৈনিক পত্রিকার খবর সূত্রে জানা যায়, বুয়েটের বাইরে থেকে গভীর রাতে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বুয়েটে এসে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায়। তারা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার দাবি তোলে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বুয়েটকে জামায়াতি ও জঙ্গিবাদীদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।

খবরে প্রকাশ, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের ওই কার্যকলাপের ফলে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে একটি পাঁচ দফা দাবি বুয়েটের উপাচার্য সমীপে পেশ করা হয়েছে। তারা ‘ফাহাদের রক্ত-বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বুয়েটকে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত রাখার দাবি তোলে। পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে চলছে। বুয়েটের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলীয় নেতাকর্মীদের এক সভায় মন্তব্য করেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির কারখানায় পরিণত করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেরকম হলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদও অন্য এক সভায় এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করেছেন।

বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে এটাও বলা হয়েছে, তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবরে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার পরে। বর্তমানে উত্তেজনার মধ্যে একজন ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল ঘোষণা করার জন্য হাইকোর্টে মামলা করেন। এ মামলা সূত্রে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জারি করা ওই নিষেধাজ্ঞার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

আমরা চাই বুয়েটে চলমান অস্থিরতা ও উদ্বেগের সুষ্ঠু সমাধান। ঘটনাবলি যেভাবে ঘটে চলছে তাতে মনে হয়, আপাতত একটা সমাধান হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সরকার একাত্ম হয়ে কাজ করছে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করার জন্য। তাদের এই চেষ্টা কি সফল হবে? বুয়েটের বাইরে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও স্বাভাবিক ও ভালো অবস্থায় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের খবর দৈনিক পত্রিকায় ক্রমাগত প্রকাশিত হচ্ছে। আর ছাত্রলীগের কর্মী-সংগঠকদের অনুচিত কার‌্যাবলির খবরও ক্রমাগত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদবিরোধী, দলীয় স্বার্থান্ধ কার্যক্রম চলছে প্রায় সর্বত্র। অবস্থার পরিবর্তন সাধনেরও সার্বিক প্রচেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি সুলভ নয়।

একটু অনুসন্ধান করলেই দেখা যায়, বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা বেড়েছে এবং বাড়ছে। ছিন্নমূল অসহায় লোকদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে অল্প কাজই করা হয়। বিষয়টি ক্রমবর্ধমান-এজন্যই আতঙ্কজনক। হিজড়াদের নিয়ে অনেকেই চিন্তাভাবনা ও কাজ করছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি কি সন্তোষযোগ্য ধারায় চলছে? অর্থনীতিকে উৎপাদন ও বণ্টন-দুইদিক থেকেই দেখতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধনিক-বণিকদের প্রাধান্য-এটা ঠিক কথা। বাংলাদেশের রাজনীতিকে তো এক ধরনের ব্যবসায়ে পরিণত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য-তারা বৈধ উপায়ে বছরে কত টাকা পাচ্ছেন? যাদের শ্রমে তাদের সম্পদ বাড়ছে, তারা কীভাবে চলছেন? তাদের শ্রমের মূল্য কি সন্তোষজনক? ধনিক-বণিক ও সফল রাজনীতিকরা কী বলবেন! গণতন্ত্র কী এবং কেন? বাংলাদেশ কি গণতন্ত্রের ধারায় চলছে? আত্মহত্যার সংখ্যা গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে অনেক বেড়েছে এবং বেড়ে চলছে। এ বিষয়টিও গুরুতর বিবেচনা দাবি করে। হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতিও বাড়ছে। চাঁদাবাজি তো কমছে না, বেড়ে চলছে। মাদকাসক্তিও বেড়ে চলছে।

গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্য কমানো দরকার ও ন্যায়ানুগ কর্মনীতি গ্রহণ করা দরকার। উন্নত চরিত্রের ন্যায়ানুগ নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে।

বাংলাদেশে জনজীবনের উন্নতির বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য অনেক কিছু করা দরকার। তবে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার জনজীবনের সব স্তরে রাজনীতি-সচেতনতা। কিন্তু বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে রয়েছে রাজনীতির প্রতি বিরূপ মনোভাব। রাজনীতিবিদদের প্রতি জনমনে ভয় আছে, কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। লোভ ও ভয় বাংলাদেশে মানুষের চালিকাশক্তি। নৈতিক চেতনা অতি দুর্বল।

দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। ইংরেজ শাসনের অবসানের পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষানীতির যেসব পরিবর্তন দেখে আসছি, তার প্রতিটিই মনে হয়েছে এক খারাপ থেকে নতুন আরেক খারাপের দিকে অগ্রগতি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ড. কুদরত-ই-খোদাকে সভাপতি করে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল, তার রিপোর্ট ভালো হয়েছিল। তাতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালের চিন্তাচেতনার অভিব্যক্তি ছিল। কিন্তু মুজিব সরকারের পর সামরিক শাসকদের কালে ওই রিপোর্টের বাস্তবায়নের কোনো চেষ্টা দেখা যায়নি। সামরিক শাসকদের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার নানা পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে; কিন্তু উন্নততর কোনো নীতি ও ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়নি। গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার উন্নতি সাধনের চেষ্টা না করে কেবল শিক্ষাব্যবস্থার ও শিল্পনীতির উন্নয়ন সাধন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। জনসাধারণকে জাগাতে হবে।

বুয়েটের অভ্যন্তরীণ ছাত্র অসন্তোষ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার কথায় চলে এলাম এ কারণে যে, ইতিহাসের দিক দিয়ে বিচার করতে গেলে রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন অপরিহার্য। গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নতি ছাড়া কেবল বুয়েটের বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধন অল্পই সম্ভব। এভাবে কিছু উন্নতি সাধন করা গেলেও সে উন্নয়ন দ্বারা বিশেষ কোনো কল্যাণ হয় না।

এখন পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রে মানুষের কেন্দ্রীয় প্রবণতা ‘ভোগবাদ’ ও ‘সুবিধাবাদ’। ভোগবাদ ও সুবিধাবাদের মধ্যে বাস করলে যে দৃষ্টিভঙ্গি দরকার, তা কী এবং কীভাবে কার্যকর করা যাবে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা দরকার-বাংলাদেশে এবং অন্য সব দেশেও দরকার। কবির একটি উক্তি মনে পড়ছে :

‘যাদের কথায় জগৎ আলো বোবা আজকে তারা,

মুখে তুবড়ি ফোটে তাদের আকাট মূর্খ যারা।’

উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার উন্নত নেতৃত্ব, উন্নত চরিত্রের নেতা।

 

 লেখক: আবুল কাসেম ফজলুল হক,  অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ - dainik shiksha অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি - dainik shiksha আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037851333618164