দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাস খোলার পর বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ছিলো বুয়েট ২২ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। ২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার মতো এই দিনও দেখা যায় ১৩০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন উপস্থিত হননি পরীক্ষা কেন্দ্রে।
পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময় ছিলো বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা। পরে সাড়ে ৯টার দিকে শূন্য উপস্থিতির পরীক্ষার হলগুলো থেকে শিক্ষকরা বেরিয়ে যান বলে জানায় ব্যাচটির একাধিক শিক্ষার্থীরা।
৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ডিএসডব্লিউর পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। ফলে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না।
৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই দিনব্যাপী জনমত নিরীক্ষণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেন। ৫ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। পরদিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ১৩ দিনের ছুটি শুরু হয় বুয়েটে।
মূলত, গত ৩০ মার্চ তারিখেও আমরা জীবনের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দেয়নি। ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল সিনিয়ররা পরীক্ষা বর্জন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়েটকে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির কালো থাবা থেকে মুক্ত করার দাবি আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ২২ ব্যাচ, সেই ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা বুয়েটের সত্যিকার অর্থে ভালো চায়, তাই তারা পরীক্ষা দিতে হলে যায়নি— জানানো হয় ২২ ব্যাচের পক্ষ থেকে।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।