দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ডক্টরেট ডিগ্রিও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ম শিথিল করে 'বিশেষ বিবেচনায়' ভর্তির সুযোগ নিয়ে পাওয়া ডক্টরেট ডিগ্রিকে অবৈধ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ডিবিএ ডিগ্রির জন্য স্নাতকে ৫০ শতাংশ নম্বরের প্রয়োজন কিন্তু বেনজীর আহমেদের স্নাতকের রেজাল্টে ৫০ শতাংশ নম্বর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনেডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতির জন্য ২০১৫ খিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি অনুষদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়।
যার উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, 'ডিনস কমিটির ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে’র সভায় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে নিয়ম শিথিল করে বিশেষ বিবেচনায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, যদি তিনি অন্য কোনো প্রকারে অযোগ্য বিবেচিত না হন।' নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৫ খিষ্টাব্দের আগস্টে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তাকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ডিবিএ প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি - দেওয়া হয়। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল 'কন্ট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি'।
তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, সব নিয়মনীতি মেনে এবং অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে। ডিবিএ প্রফেশনাল ডিগ্রি বিধায় ছুটির কোনো প্রয়োজন নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, ডিবিএ ডিগ্রির জন্য স্নাতকে ৫০ শতাংশ নম্বরের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেনজীর আহমেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে স্নাতকের রেজাল্টে ৫০ শতাংশ নম্বর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী, সিজিপিএ-৪-এর ক্ষেত্রে সিজিপিএ-৩ থাকতে হয়। এ ধরনের ডিগ্রির ক্ষেত্রে চাকরিরত প্রার্থীদের ছুটি নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে সেটিও মানা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, 'সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর সাহেব এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ সাহেব দুজনেই পিএইচডি করেছেন নিজ নিজ পদে থেকে। আচ্ছা পিএইচডি করতে গবেষণা লাগে না? গবেষণা করতে ছুটি লাগে না? এই দুজন কি চাকরি থেকে সম্পূর্ণ ছুটি নিয়ে পিএইচডি করেছিলেন? ছুটি না নিয়ে থাকলে কি নিয়মের ব্যত্যয় হয় না? যদি নিয়ম থেকে থাকে যে পার্ট টাইম পিএইচডিতে ছুটি লাগে না তাহলে আজকেই সেই নিয়ম বাতিল করা উচিত।
পিএইচডি প্রোগ্রাম কখনো পার্ট টাইম হতে পারে না। বিশেষ করে বাংলাদেশে পার্ট টাইম পিএইচডি মানেই ধরে নেওয়া হয় কোনো রকমে একটা সার্টিফিকেট।'