রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতের ঘটনায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) চার শিক্ষক ও দুই কর্মকর্তাকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
মামলার আসামি চার শিক্ষক হলেন- গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিয়ার রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মোহা. মাহমুদুল হক।
দুই কর্মকর্তা হলেন, সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লার সাবেক পি এস ও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আমিনুর রহমান ও প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার রাফিউল হাসান।
গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ হত্যা ঘটনায় ১৮ আগস্ট শিক্ষক মো. মশিয়ার রহমান ও মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার রাফিউল হাসানসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।
তবে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে আবু সাঈদের পরিবার থেকে আসামি করতে না চাইলে আন্দোলনকারী ও কয়েকজন শিক্ষকের চাপের মুখে তাকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে অন্য একটি মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশে আঘাত এবং আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে সাধারণ ও গুরুতর জখম, হত্যার ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি দানের অপরাধে গত ২৫ আগস্ট তাবিউর রহমান প্রধান ও আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন মো. কাশেম (৪৩)।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনের দিন রংপুর মর্ডানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মানিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালক। পরে ২০ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে তাজহাট থানায়। তখন মাহামুদুল হকের নাম ছিলো না। পরে ১৯ অগাস্ট নিহত মানিক মিয়ার মা নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। সেখানে ১১৯ জনের মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক মশিউর রহমান ও মাহামুদুল হক যোগসাজশে পতাকা মামলা দিয়েছিলেন সফল হয়নি এখন হয়রানির করার জন্য বাদী ও আইনজীবীর সঙ্গে যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দিয়েছে মাহমুদুল হক।
মোহা. মাহমুদুল হক বলেন, আমি সাত বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে একজন শিক্ষক নিয়োগ পান, যার বিরুদ্ধে আমি আবার হাইকোর্টে মামলা করি, কোর্ট রুল দেয় যেকেনো জালিয়াতির জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত এক কমিটি অবৈধ নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই শিক্ষক তার চাকরি বাঁচাতে বাদী বা আইনজীবীকে প্রভাবিত করে আমাকে আসামি করতে পারেন।
আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ বলেন, আমি সেদিন প্রশাসনের অনুরোধক্রমে প্রক্টর স্যারসহ ঘটনাস্থলে যাই তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে সেই স্থান ত্যাগ করি। আবু সাঈদকে পুলিশ যে গুলি করেছে সেই ভিডিয়ো পুরো দেশবাসী দেখেছে, আমি অনেক আগেই সেখান থেকে চলে আসি। আমাকে ষড়যন্ত্র করে মামলা দেয়া হয়েছে।
মো. মশিয়ার রহমান বলেন, যাতে কোনো ধরনের সংঘর্ষ না হয় সেজন্যই আমি সেইদিন সেখানে গিয়েছিলাম শিক্ষক হিসেবে নিজের বিবেকের জায়গা থেকে। আমার গায়ে ইটের আঘাত লাগায় সুরক্ষার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীর দেয়া হেলমেটটি পড়েছিলাম। আমি সংঘর্ষ থামাতে বলছি এমন ভিডিয়ো আমার কাছে আছে। পরিকল্পিতভাবে আমাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
আমিনুর রহমান বলেন, এমনটা মামলার কথা আমি শুনেছি। তবে সেখানে যে ঠিকানা দেয়া আছে সেটা আমার না। আমার মনে হচ্ছে এই সব মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত আসামিদের ঢাকার জন্য কারসাজি।