দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে অনিয়ম বন্ধে চালু হচ্ছে অটোমেশন পদ্ধতি। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া হবে সফটওয়্যারে। ফলে অনিয়ম ও অর্থের বিনিময়ে অমেধাবীদের ভর্তির সুযোগ থাকছে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, অটোমেশন অনুযায়ী ভর্তিতে মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ থাকবে। বন্ধ হবে দ্বিগুণ অর্থের বিনিময়ে ভর্তির সুযোগ। আগামী মাসের (জুন) প্রথম সপ্তাহে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হবে।
বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সংযুক্ত ছিলেন তারাই অটোমেশন পদ্ধতি দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন। অন্যদিকে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেন, এটা একটি ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলো। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকার বাইরের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে চাইবে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে আগের ভর্তি পদ্ধতি উপযুক্ত ছিল বলে দাবি করেন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। অনেকে বলেন, এই পদ্ধতি বহাল থাকলে অনেকগুলো মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অটোমেশন পদ্ধতিতে অসচ্ছলদের আবেদন করার দরকার নেই। তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। যারা প্রকৃত গরিব, তারা যেন ভর্তির সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করবে সরকার। এই জন্য নির্ধারিত কমিটি রয়েছে। যারা ভর্তি হবে বলে পুরোপুরি নিশ্চিত তাদেরই অটোমেশন পদ্ধতিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে বলা হবে। ১ হাজার টাকার বিনিময়ে আবেদন করা যাবে। দেশে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আছে ৬৬টি। এর মধ্যে ছয়টি মেয়েদের জন্য নির্ধারিত। ৬০টিতে ছেলেরা আবেদন করতে পারবেন। আর মেয়েরা ৬৬টিতে আবেদন করতে পারবেন। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৬ হাজার ৯৭টি। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার আসন বিদেশি কোটায় সংরক্ষিত। বাকি আসনগুলোতে ভর্তি করা হবে অটোমেশন পদ্ধতিতে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ সার্কুলার দেওয়া হবে। মেধা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পছন্দের মেডিক্যালে ভর্তি হতে পারবেন। যারা অটোমেশনে যোগ্য হবেন, তাদের পাঁচ দিন আগে থেকে তিন বার ভর্তি হওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হবে। কেউ ভর্তি না হলে মেধা অনুযায়ী অন্যদের সুযোগ দেওয়া হবে। অবশ্য ভর্তি হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েই আবেদন করতে হবে। সরকার নির্ধারিত প্রায় ১৯ লাখ টাকা দিয়ে ভর্তির হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি হলো সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছ। মেধাবীরা ভর্তির সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে হয়রানি থেকে তারা রক্ষা পাবে। কোনো ধরনের প্রভাব ও হয়রানি থাকবে না অটোমেশন পদ্ধতিতে।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বেলায় শিক্ষার্থীদের মেধার তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো না। ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করলেই ভর্তির নির্ধারিত ফ্রির দ্বিগুণ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে পারত। এদের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। এককথায়, টাকা থাকলেই বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল। অটোমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এটা বন্ধ হয়ে যাবে। মেধাক্রম ও কলেজ বাছাইয়ের ক্রমানুসারে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। অটোমেশনের মাধ্যমে একই সঙ্গে মেধাক্রম ও অপশনকে মেইনটেইন করা হবে। যিনি ৬৬টি অপশন পূরণ করবেন না, তার আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিক্যালে পড়তে এখন মেধা এবং টাকা দুটিই লাগবে।