দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ‘ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকবে কেন?— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন ছুড়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে?
রোববার (১৯ মে) দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিকের প্রাণ যায়। তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদেরর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘ব্যাংক কি সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট, রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো মানুষ যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যাবেই। সাংবাদিকরা তো কানাডা, মালেশিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। আপনাদের কাছের লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বৃত্তের মালিক হয়েছে, তারা দেশের বাইরে বাড়ি করেছে। তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের একটি পত্রিকা লিখলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্ট্রেটমেন্ট দিল, কারণ তারা সরকারের চাকরি করে। সরকার যা বলবে তাদেরকে তাই শুনতে হবে। কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে, সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে?’
‘কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। এটার তো দৃষ্টান্ত আছে। কয়েক বছর আগে ৮.১০ মিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়েছে, তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিপোর্ট দিতে পারেনি। এ কারণে ঢুকতে না দেওয়ার মধ্যেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে?— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতর বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কীসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি তা নিজেরাই বলতে পারব না। শুধু ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার বক্তব্য না এটা সিডিপির বক্তব্য। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। লুটপাটকারি সবাই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজন।’
রিজভী বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ এখন তলানিতে। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার চলে যাবে।’
‘ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণনারীর মুখে লিপিস্টিক দিলে যা হয়, এ সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে সেই ধরনের’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশের মানুষ দিনাতিপাত করছে। অতিক্রম হওয়া দিন কোনোটিই সুখকর নয়। এখানে জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের মনোভাব ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার একের পর এক পন্থা অবলম্বন করছে। মধুখালীতে শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যা একটি পন্থা। এরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না। এরা মানুষের লাশ ও রক্তপাতের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে ভালবাসে।’