ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনির নাম না থাকায় বরগুনার আমতলী উপজেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। ওই চেয়ারম্যানে সন্ত্রাসী বাহিনী অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে আমতলী উপজেলার গোজখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরকারি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন অভিভাবক ও শিশু শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সরকারিভাবে ইউনিয়নে দুই দিনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। রোববার ছিলো উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের ২৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান। ওইদিন সকালে ইউনিয়নের সব বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত হয়। সকালে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান শুরু হয়। ওই অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে চলছিলো।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দুপুর ১ টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনির পালিত সন্ত্রাসী শাহিন হাজী, হাসান, বাদল সুজনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন লোক এসে ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম না রাখায় শিক্ষকদের গালিগালাজ করে এবং ব্যানার ছিড়ে নেয়। পরে তারা ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তাদের কর্মকাণ্ডে মাঠে থাকা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। শিশু প্রতিযোগী ও অভিভাবকরা তাদের ভয়ে ছুটো ছুটি করে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সরকারিভাবে আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়ার শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী শাহিন হাজী, হাসান, বাদল ও সুজনসহ তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শাহিন হাজী, হাসান, বাদল ও সুজনসহ ৭-৮ জন সন্ত্রাসী এসে ব্যানারে চেয়ারম্যানের নাম নেই কেনো? বলেই শিক্ষকদের গালাগাল শুরু করে ব্যানার ছিড়ে নিয়ে যায় এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। শিক্ষকরা অনুরোধ করেছিলেন ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ না করতে কিন্তু তারা তা শুনেনি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মাঠে থাকা শিশু প্রতিযোগীরা ভয়ে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
অভিযুক্ত শাহীন ও হাসান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ব্যানার ছিড়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন ও মো. জাহিদ লিটন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ৭-৮ জন লোক মাঠে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে মাঠে চলমান ক্রীড়ানুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা অনুষ্ঠান বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা তা শোনেনি।
আমতলী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মোঃ মনিরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ব্যানারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নাম না থাকায় চেয়ারম্যানের লোকজন ব্যানার ছিড়ে নিয়ে ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিকুল আলম বলেন, দুই দিনের অনুষ্ঠানের বাকি অংশ হবে সোমবার।
আমতলী থানার ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকারিভাবে আয়োজিত ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ ও ব্যানার ছিড়ে নেয়ার ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ অনুষ্ঠানের খবর প্রশাসনের কেউ জানে না তাই ইউএনও ক্রীড়া অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।