ব্লেন্ডেড শিক্ষা বাংলাদেশের সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে এটি যে শুধু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বদলে দেবে তা নয়, এটি দেশকে বদলে দেবে। আমরা যে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তা উপনিবেশিকদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। দুই থেকে তিন শতাব্দী আমরা সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় অভ্যস্ত ছিলাম। এ শিক্ষা ব্যবস্থা সে সময়ের জন্য উপযোগী ছিলো। তবে আমরা যে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলছি তা আজ ও আগামীর জন্য। এ শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য প্রস্তুত করে। তাদের জীবনমুখী শিক্ষা দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বনানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত 'এক্সেলারেটিং ব্লেন্ডেড এডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ' শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক পরামর্শ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ ৰূপকল্প অর্জনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি, এনজিওসহ সবার একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও এসপায়ার ট্রু ইনোভেটের (এটুআই) সহযোগিতায় আয়োজিত এই ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম, সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজমসহ শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড এডুকেশনাল মাস্টার প্ল্যান (২০২২-২০৩১) তুলে ধরেন এবং সেখানে বাংলাদেশে একটি এডুকেশন এক্সিলারেটর গঠনের কথা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগে এবং বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি এক্সিলারেটর গঠন করা হয়। এডুকেশন এক্সিলারেটরের চারজন কো-চেয়ার হলেন, শিক্ষামন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, এনজিও প্রতিনিধি হিসেবে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন রুবানা হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআইয়ের পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্রেডেড শিক্ষা উপযোগী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কী কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তার ওপরে একটি আলোচনা হয়। প্যানেলিস্ট হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এডুকেশন স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড তানিয়া মিলবার্গ।
বিগত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কন্টেন্ট তৈরি, বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করতে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। কোভিডকালীন সময়ে পুরো বিশ্বের মতো দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস নেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিওসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়। করোনা পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইন মিশ্রণ ব্লেন্ডেড শিক্ষার পদ্ধতির নীতি প্রণয়ন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে মোট ১০টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে ব্রেডেড শিক্ষা ও দক্ষতা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে।
আয়োজকরা বলছেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মোকাবেলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেডেড শিক্ষা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের উপযোগী করে তোলার জন্য সচেতনতা তৈরি করা এই কর্মশালার অন্যতম লক্ষ্য। রেডেড শিক্ষা পদ্ধতিকে উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে দেশে প্রযুক্তিনির্ভর সাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করা সম্ভব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে এখন রেন্ডের শিক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নেই। আধুনিক প্রযুক্তিকে সবার জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করা দেশের জন্য একটি এখন বড় নতুন কারিকুলামে তাই সমস্যা সমাধান ভিত্তিক শিখন ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।