ভারতে পাঠ্যবই ছাপা আর না, টেন্ডার বাতিল - দৈনিকশিক্ষা

অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগভারতে পাঠ্যবই ছাপা আর না, টেন্ডার বাতিল

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

অবশেষে ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিষয়টি নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর  এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র ডিজিটাল প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে। তার পর এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে দৈনিক শিক্ষাডটকম। তাতে দেখা যায়, ভারতীয় প্রকাশকদের দেশের বই ছাপাতে দেয়াকে সমর্থন করেন না ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি। ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো? শিরোনামে মন্তব্য প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় শিক্ষা বিষয়ক এ দুই সংবাদমাধ্যমে। এমন সিরিজ সংবাদের ধারাবাহিকতায় টনক নড়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের। শুরু হয় উচ্চ স্তরে তোড়জোড়। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি ওই টেন্ডার বাতিল ও নতুন করে টেন্ডার করার সিদ্ধান্ত দেয়। ক্রয় কমিটি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দুই ভারতীয় প্রকাশককে দেওয়া ১৮ টি লটের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর ইতি ঘটলো। গত ১৫ বছর ধরে প্রতিবছরই ভারতে উল্লেখযোগ্য পাঠ্যবই ছাপানো হতো।

এবারও ভারতীয় দুই প্রকাশককে দেয়া হয়েছিলো প্রায় ১ কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকের প্রায় এক কোটি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পেয়েছিলো প্রিতম্বর বুকস প্রাইভেট লিমিটেড ও পাইওনিয়ার প্রিন্টার্স। আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান ও মূল্যায়ন শেষ করে ১৭টি লটে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ পায় ভারতীয় ওই দুই প্রকাশক। দুই তিন মাস আগে ডাকা এই অপকর্মের পেছনে ছিলেন দীপু মনির ভাই টিপু এবং বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম ও এনসিটিবির তথ্যজ্ঞ বেসরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার সিন্ডিকেটের পছন্দের মোসা. নাজমা আখতার। যিনি এনসিটিবির সচিব। এনসিটিবির সাইদুর রহমান।

ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার অভিযোগ ছিলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষার সচিব ফরিদ আহম্মদের বিরুদ্ধে। গত জুলাই মাসে এই সিন্ডিকেটে যুক্ত হন গত ১২ বছর ধরে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থা ধবংসের কারিগর অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) হিসেবে আছেন জুলাই থেকে। রবিউলের স্ত্রী-সন্তানসহ অনেকেই বিদেশে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দীপু মনির খুবই পছন্দের লোক রবিউল। প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের প্রধান ছিলেন এক যুগের বেশি। 

আরো পড়ুন: ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি

পাঠ্যপুস্তক ছাপায় বিশেষজ্ঞ শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক অধ্যাপক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বিন্দুমাত্র যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলেও শুধু ছাত্রলীগ নেত্রী পরিচয়ে আর সিন্ডিকেটের ইশারায় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব পদে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া দীপু মনি পছন্দের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা নাজমা আখতার বহাল আছেন, কলকাঠি নাড়ছেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রয়েছেন পলাতক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নুর তাপসের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করা ফরিদ আহম্মদ। ভারতীয় কোম্পানিকে দেয়া কাজ যেনো বাতিল না হয় সেই বিষয়ে অনড় অবস্থানে প্রাথমিকের সচিব আহম্মদ। তিনি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আছেন। টেন্ডারে এমনভাবে শর্ত দেওয়া সাজানো হয় যেন ওই দুই ভারতীয় কোম্পানিই কাজ পায়। চার কোটি টাকা লেনদেন হয় ওই দুই ভারতীয় কোম্পানির লোকাল এজেন্ট প্রকাশক ও মুদ্রাকরের মাধ্যমে। গণশিক্ষা সচিব ফরিদের মতামত জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। অবশ্য তিনি গত সপ্তাহে অপর এক প্রতিবেদনে জন্য চেয়ে পাঠানো মতামতে মেসেজে লিখেছিলেন, ‘বিষয়টি এনসিটিবির। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের না।’   

এনসিটিবির সাবেক একজন সদস্য দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ, এনসিটিবির সচিব মোসা: নাজমা আখতার, সাইদুর রহমান ও রবিউল কবীর অনড় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া বই ছাপার কাজ কোনোভাবেই বাতিল করা যাবে না। তিনি বলেন, একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও শিক্ষাখাত ধবংসের হোতা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপু ও দীপুর ঘনিষ্ঠ রতন মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন নাজমা। টেন্ডার বাতিলের মাধ্যমে তাদের কব্জা থেকে পাঠ্যবই উদ্ধার হলো।
 
এদিকে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে ফরিদ আহম্মদ বলেন, বিষয়টি এনসিটিবির। আর ইতিমধ্যে এনটিবি থেকে বিদায় নেওয়া ফরহাদুল, নাজমা ও সাইদুর অভিযোগ অস্বীকার করেন।  ভারতীয় কোম্পানীর লোকাল এজেন্টকে খুঁজছে সবাই। 
প্রথম দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রার্থীরা - dainik shiksha প্রথম দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রার্থীরা পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়া যেভাবে আড়ালে - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়া যেভাবে আড়ালে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দখলে বেপরোয়া ছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দখলে বেপরোয়া ছিলেন সাদিক আব্দুল্লাহ জাতি গঠনের সুযোগ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha জাতি গঠনের সুযোগ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026700496673584