ভারত মহাসাগরে মার্কিন ঘাঁটি নিয়ে টানাটানি - দৈনিকশিক্ষা

ভারত মহাসাগরে মার্কিন ঘাঁটি নিয়ে টানাটানি

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট এক প্রবাল দ্বীপ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য আজও সেখানে অস্ত যায়নি। শুধু তা-ই নয়, ওই দ্বীপে রয়েছে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি। এ হেন প্রবাল প্রাচীরে হঠাৎই নজর পড়েছে চীনের। চুপিসারে দ্বীপটি কব্জা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। 

ভারত মহাসাগরীয় ওই প্রবাল দ্বীপের নাম দিয়েগো গার্সিয়া। অনন্ত জলরাশির মধ্যে ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যা গড়ে উঠেছে। তবে জায়গাটায় দিয়েগো গার্সিয়াই একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, এ কথা ভাবলে ভুল হবে। মোট ৬০টি ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপের মালা রয়েছে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণের ওই এলাকায়। গোটা দুনিয়া যাকে চেনে ‘চাগোস দ্বীপপুঞ্জ’ হিসাবে। 

এই দ্বীপগুলির মধ্যে আকারের দিক থেকে দিয়েগো গার্সিয়াই সবচেয়ে বড়। ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দে যার সন্ধান পান পর্তুগিজ নাবিক পেড্রো মাসকারেনহাস। প্রবাল দ্বীপগুলি জনমানবশূন্য হওয়ায়, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি তিনি। পরবর্তী কালে স্পেনীয় অভিযাত্রী দিয়েগো গার্সিয়া দে মোগুয়ের ফের পৌঁছান ওই দ্বীপে। নিজের নামেই করেন প্রবাল প্রাচীরের নামকরণ। সেটা ছিল ১৫৪৪ খ্রিষ্টাব্দ।

১৮ শতক পর্যন্ত দিয়েগো গার্সিয়া ছিল জনমানবহীন। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মরিশাসের ফরাসি গভর্নরের নজরে পড়ে ওই প্রবাল দ্বীপ। লোক-লস্কর পাঠিয়ে সেখানে নারকেল চাষ শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি, চলে দেদার মাছ শিকার। বলা বাহুল্য, নারকেল চাষে কাজে লাগানো হয়েছিল দাসদের।

১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্ঠরোগীদের উপনিবেশ হিসেবে দিয়েগো গার্সিকাকে ব্যবহার করতে শুরু করেন মরিশাসের ফরাসি শাসকেরা। তত দিনে ব্রিটিশরা অবশ্য দ্বীপটি দখলের দু’-একবার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে কোনও বারই মেলেনি সাফল্য। ১৭৯৩ থেকে প্রবাল দ্বীপটিতে নারকেল চাষ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। উৎপাদন বাড়াতে জাহাজ ভর্তি করে দাসদের সেখানে আনতে শুরু করে ফরাসিরা।

১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে শেষ হয় দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যুদ্ধ। এলবা দ্বীপে নির্বাসিত হন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। লড়াই হেরে যাওয়ায় দিয়েগো গার্সিয়া ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেয় ফরাসি সরকার। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে যাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে শুরু করেন ইংরেজ প্রশাসকেরা। যা নিয়ে পরবর্তী কালে দেখা দেয় নতুন রাজনৈতিক জটিলতা।

গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে আমেরিকাকে নৌঘাঁটি তৈরির জন্য দিয়েগো গার্সিয়ার জমি লিজ় দেয় ব্রিটিশ সরকার। এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ৫০ বছরের চুক্তি হয়েছিল। যা সম্প্রতি আরও ২০ বছর বৃদ্ধি করা হয়ছে। ফলে, ২০৩৬ পর্যন্ত সেখানে নৌবহর রেখে দিব্যি ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় নজরদারি চালাতে পারবে আমেরিকা।

কিন্তু, এই আবহে দিয়েগো গার্সিয়া তাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি তুলেছে মরিশাস। যা নিয়ে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাস হয় একটি সম্মতিপত্র। যাতে এই নিয়ে মীমাংসার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে (আইসিজে) অনুরোধ করা হয়েছিল। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে দিয়েগো গার্সিকাকে আলাদাভাবে দেখার বিষয়টিকে অবৈধ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত মহাসাগরীয় প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। সেখানে বলা হয়েছে, মরিশাস স্বাধীনতা লাভ করলেও সেখানকার ঔপনিবেশিকরণের সমাপ্তি আইনসম্মতভাবে হয়নি। ফলে ব্রিটেনকে যত দ্রুত সম্ভব সেখানকার প্রশাসন চালানো থেকে সরে আসতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই রায় অবশ্য ব্রিটিশ সরকার মানতে নারাজ।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, দিয়েগো গার্সিয়ার অবস্থানের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর কৌশলগত গুরুত্ব। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় নজরদারি চালানোর জন্য এই দ্বীপকে ব্যবহার করে আমেরিকা।

এ ছাড়া ওই দ্বীপে বছরের পর বছর ধরে থাকার ফলে উন্নত সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে আমেরিকা। বিগত কয়েক বছর ধরেই যাদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে চীন। দিয়েগো গার্সিয়া হাতে থাকলে খুব সহজেই সেখান থেকে নৌবহর পাঠিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর বা জাপান সাগর পর্যন্ত বেজিংয়ের আগ্রাসন রুখতে পারবে ওয়াশিংটন। শুধু তা-ই নয়, সে ক্ষেত্রে তাইওয়ান আক্রমণের আগেও দু’বার ভাবতে হবে চীনকে।

চলতি বছরের নির্বাচনে ব্রিটেনে দীর্ঘ দিন পর ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন কেয়ার স্টারমার। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চাগোস সমস্যা নিয়ে রীতিমতো চাপের মুখে রয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা দিয়েগো গার্সিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না, তা দেবা না জানন্তি।

কিছু দিন আগে মরিশাস সফরে গিয়ে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দিয়েগো গার্সিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মরিশাসের হাতে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সূত্র: আনন্দবাজার 

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041749477386475