আইনের শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত পড়ালেখা ও অধ্যবসায় করে, তাহলে তাকে টাকার পেছনে দৌড়াতে হবে না, টাকাই তার পেছনে দৌড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। গতকাল বুধবার রাজধানীর বারিধারায় ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএসের আইন বিভাগের ‘নবীনবরণ, বিদায় ও সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইউআইটিএসের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ^বিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা ও আইন অনুষদের ডিন অ্যাডভোকেট ড. মো. আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মো. রবিউল আলম বুদু, ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন, বিশ^বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাহ উদ্দীন আহমেদ, আইন বিভাগের প্রধান রোস্তমা বেগম চৌধুরী বক্তব্য দেন। এছাড়া নবীন ও বিদায়ী শিক্ষার্থী এবং নতুন আইনজীবীদের থেকে একজন করে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সবার আগে মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইউআইটিএসের প্রতিষ্ঠাতা সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের আদর্শের কথা স্মরণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠান থেকে আপনারা (কর্মক্ষেত্রে) যাচ্ছেন, সে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার সম্মান আপনারা রাখবেন, এটা আমার অনুরোধ। তিনি মানুষের সেবা করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি করেছেন।’
আইনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা যদি মনে করি শুধু টাকা আয় করব, তাহলে টাকা আয়ের অনেক রাস্তা আছে। এ পেশাতে না এলেও টাকা আয় করা
যায়। আর নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আপনি যদি লেখাপড়া করেন, অধ্যবসায় করেন, অবশ্যই একদিন আপনার পেছনে টাকা দৌড়াবে। আপনাকে টাকার পেছনে দৌড়াতে হবে না।’
আইনজীবীদের সমাজ গড়ার কারিগর বলা হয় এবং সমাজ গড়তে হলে তার বেশ কিছু দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আগে নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একজন ভালো মানুষ ভালো আইনজীবী হতে পারেন, একজন ভালো মানুষ ভালো বিচারক হতে পারেন। একজন ভালো মানুষ সমাজের সর্বস্তরের নেতৃত্ব দিতে পারেন।’
নতুন আইনজীবীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা যখন কোর্ট-কাচারিতে যাবেন, তখন অনেক ভালো এবং খারাপ জিনিস দেখবেন। কিছু আইনজীবীকে দেখবেন তারা মামলা করে, পড়ালেখা করে প্রস্তুতি নিয়ে তার বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন। আবার কিছু আইনজীবীকে দেখবেন, তারা কিছুই করেন না, ফাঁকিবাজি করে ঘোরাঘুরি করে মক্কেলদের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে থাকেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, সব কিছুই দেখবেন, তবে ভালো জিনিস গ্রহণ করবেন। ভালো অভিজ্ঞতা নেবেন, খারাপটা নেবেন না।’
মক্কেলদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আমিন উদ্দিন বলেন, ‘একজন মক্কেলের সঙ্গে যদি খারাপ ব্যবহার করেন, কোনো অন্যায় আচরণ করেন, তাহলে আপনার কাছে কেউ আসবেন না। সবাই তখন জেনে যাবে। এখানে যিনি ভালো করবেন তিনিই টিকে থাকবেন। আপনার জন্য কেউ আসন ছেড়ে দেবে না, আপনার আসন আপনাকেই অর্জন করে নিতে হবে।’
একটি মামলা পরিচালনা করতে হলে সে মামলার ঘটনা জানার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি যদি না জেনে যুক্তিতর্ক করেন, তখন আপনার প্রতিপক্ষ আইনজীবী জেনেশুনে আইন দ্বারা বক্তব্য দিয়ে আপনাকে হারিয়ে দিবেন। তখন মক্কেলদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।’
আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আইন কোনো ব্যবসা নয়, এটা পেশা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে লাভ করা, আর পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে মানুষের সেবা করা। আমরা পেশাজীবী হিসেবে কাজ করব, মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’ আইনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা একদিন দেশের ভালো আইনজীবী হবেন। আপনাদের থেকেই কেউ অ্যাটর্নি জেনারেল হবেন, বিচারপতি, প্রধান বিচারপতি হবেন। জুডিশিয়ারিতে অনেকেই যাবেন।’ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা বিশ^বিদ্যালয়ের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। সে মামলা আমাকে পরিচালনা করতে হয়েছে। আমি তখন অনেক কষ্ট পাই, যখন দেখি শিক্ষাঙ্গনে ব্যবসা করার জন্য আসেন। শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়ে থাকে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মো. রবিউল আলম বুদু বলেন, যারা নতুন এসেছেন তারা ভালো করে স্বপ্ন দেখবেন। তবে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা পাস করেছেন তাদের দায়িত্ব বেশি। কারণ আপনাদের প্রতি নজর রাখবেন নবীনরা। আপনাদের কাজের ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী প্রজন্ম। আইন পড়ে আপনি কেবল আইনজীবীই নন, আপনি ভালো কনসালটেন্ট হতে পারেন, এমন কি বিসিএসও দিতে পারবেন।’
আইনের শিক্ষকদের নেতৃত্বের প্রশংসা করে ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এবং পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘আপনাদের নেতৃত্বে ইউআইটিএসের আইন অনুষদ বাংলাদেশের এক নম্বর হবে ইনশাল্লাহ।’ অতীতে নিজে ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছে ছিল, তবে তা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ইউআইটিএসকে দেখার পাশাপাশি আইন অনুষদের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত থাকতে চাই, যেন কোনো এক সময় আপনাদের মাধ্যমে সার্টিফিকেশন পাই আপনারা আমাকে ব্যারিস্টার ডাকছেন।’
মহাভারতের একটি গল্প শুনিয়ে আলী হোসেন বলেন, ‘এই থেকে আমরা শিখলাম, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, দান-দক্ষিণা করতে হবে, অহংকারমুক্ত হতে হবে, নিজেকে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে নিতে হবে, রাগ-ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বাবা-মাকে সম্মান করতে হবে।’