টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) দুটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের তোপের মুখে ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন লাঞ্ছিত হন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষকস্বল্পতা দূর করার জন্য সম্প্রতি ফার্মাসি বিভাগ ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. ফরহাদ হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা এ সিদ্ধান্ত না মেনে প্রচলিত নিয়মে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তোলেন। ওই দাবিতে সাড়া না দিয়ে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেন ভিসি। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকেরা।
ফার্মাসি বিভাগের প্রভাষক পদের প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার দিন ছিল গতকাল সোমবার। পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ৬০ জনের বেশি প্রার্থী। সব প্রস্তুতিও গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাসুদার রহমানের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষক ভিসির কার্যালয়ের সিঁড়ির সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা কোনোভাবেই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ভিসি এবং এক্সটার্নালদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। বেলা ১১টার দিকে ভিসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এক্সটার্নালদের সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হলে শিক্ষকেরা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এ সময় উচ্চ বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে ভিসি কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে কতিপয় শিক্ষক তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। এরপর নিজ কার্যালয়ে ফিরে যান ভিসি।
ড. মাসুদার রহমান বলেন, ‘এর আগেও সমাবর্তনে ডিন অ্যাওয়ার্ড বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ভিসি এককভাবে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শতাধিক শিক্ষক ভিসির কার্যালয়ের নিচে অবস্থান নেন। তাঁদের উপেক্ষা করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নির্ধারিত কেন্দ্র এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সম্মেলনকক্ষে যেতে চাইলে কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। পরে তিনি উচ্চ স্বরে মন্তব্য করতে করতে তাঁর কার্যালয়ে ফিরে যান। এ ঘটনায় আমিও বিব্রত হয়েছি।’
ভিসি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষা নিয়ে আমি শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাচ্ছি। যাতে স্বচ্ছতা থাকে। প্রচলিত নিয়মে শুধু ভাইভা নিত, যেখানে উল্টাপাল্টা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাচ্ছি, এতে তাঁরা রাজি নন।’
ভিসি আরও বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে কখনোই শিক্ষক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও রিজেন্ট বোর্ড থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নিয়োগ কমিটি আছে। সেই কমিটি নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে শিক্ষকদের দাবি থাকতে পারে, কোনো অবস্থাতেই যাতে খারাপ বা দুর্বল শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া না হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি যাতে না করা হয়, সেই বিষয়ে শিক্ষকদের দাবি থাকতে পারে।’