ঘুষ নিয়ে ভিসা দেওয়ার বিরুদ্ধে বিশাল অভিযান চালিয়েছে সৌদি আরবের তদারকি ও দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা। অভিযানে ৮ বাংলাদেশি, ঢাকার সৌদি দূতাবাসের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার আরব নিউজ ও দৈনিক আল-মারসদসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়।
খবরে বলা হয়, গ্রেপ্তার দুই কর্মকর্তা ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সাবেক প্রধান ও উপরাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ফালাহ মুদাহি আল-শাম্মারি এবং কনস্যুলার বিভাগের উপপ্রধান খালেদ নাসের আয়েদ আল-কাহতানি। এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৫৪ কোটি টাকা (৫ কোটি ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল) ঘুষ নিয়েছেন। তদন্তের সময় এই অর্থের একটি অংশ সৌদি আরবে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। বাকি টাকা সৌদি আরবের বাইরে বিনিয়োগ করেছেন।
গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা হলেন আশরাফ আল-দীন আকন্দ, আলমগীর হোসেন খান, শফিক আল-ইসলাম শাহ জাহান, মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন নুর, আল-আমিন খান শহীদুল্লাহ খান, জায়েদ ইউ সাইদ মফি, আবু আল-কালাম মুহাম্মদ রফিক আল-ইসলাম ও আজিজ আল-হক মুসলিম আল-দীন।
গ্রেপ্তার সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হলেন আদালতের নিরাপত্তাবিষয়ক সার্জেন্ট (রিয়াদ অঞ্চলের পুলিশ) মেতাব সাদ আল-ঘনউম ও রিয়াদের স্পেশাল মিশন ফোর্সের করপোরাল হাতেম মাস্তুর সাদ বিন তাইয়েব। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি বিনিয়োগকারী সালেহ মোহাম্মদ সালেহ আল-শালাউতকে আটক করা হয়েছে।
সৌদি আইনজীবী ওমর আল-জুহানি সৌদি গণমাধ্যমকে জানান, গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের কর্মচারীদের সঙ্গে অবৈধ ভিসা বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এ ছাড়া তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ২ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল, স্বর্ণের খণ্ড এবং বিলাসবহুল যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। এগুলো বেআইনিভাবে সৌদিতে কাজের ভিসা বিক্রির আয় বলে প্রমাণিত হয়েছে।এদিকে ঢাকার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ঘুষ নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার অভিযোগে সৌদি দূতাবাসের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়া তৃতীয় কর্মকর্তার নাম জানা যায়নি।
পরিচয় প্রকাশ না করে সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভিসা বাণিজ্যের ব্যাপারে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, প্রায় এক বছর আগে ঢাকার সৌদি দূতাবাস রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো থেকে প্রতিটি ভিসা দেওয়ার জন্য ২২০-২৫০ মার্কিন ডলার আদায় করত। সৌদি দূতাবাস নিয়ম করেছিল, একটি রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে ২০টির বেশি ভিসা আবেদন জমা দিতে পারবে না। একটি এজেন্সি সপ্তাহে মাত্র একবার ভিসা আবেদন করতে পারে। অথচ অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে কয়েকশ পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করে। ভিসা পেতে এই এজেন্সিগুলো সমস্যায় পড়ে যায়। এজেন্সিগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মীদের ভিসা পাইয়ে দিতে মরিয়া হওয়ায় দূতাবাসের কর্মীরা টাকা নেওয়া শুরু করে। এভাবে টাকার বিনিময়ে সৌদি ভিসা দেওয়া শুরু হয়। সংকট থাকার পরও তাদের ডলারে অর্থ দিতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সৌদি কর্মকর্তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পর ঘুষ আদায় বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব।