ভুয়া পদ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-পদোন্নতি - দৈনিকশিক্ষা

ভুয়া পদ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ-পদোন্নতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অডিট সেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত অর্গানোগ্রামে পদ সাতটি। একটি জালিয়াতি চক্র ইউজিসির এ-সংক্রান্ত ভুয়া চিঠি জমা দিয়ে সেখানে ১২টি পদ সৃজন করে। পরে নতুন সৃজনকৃত অডিট সুপারিনটেনডেন্ট পদে মো. আশরাফুল ইসলামকে চাকরি দেওয়া হয়। তার চাকরিতে প্রবেশের প্রায় ১ বছর ৩ মাস পর সংশ্লিষ্ট পদটিকে বিলুপ্ত করে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে রূপান্তর করা হয়। এ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আশরাফুল ইসলাম দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে যান। পরে আরেক দফা পদোন্নতি পেয়ে তিনি অডিট সেলের সহকারী পরিচালক হন। জালিয়াতির ঘটনা জানাজানির পর বিএসএমএমইউর অর্থ ও হিসাব বিভাগ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনা তদন্তে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

জানা গেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া পদ সৃষ্টি করে চাকরি নেওয়া ও পদোন্নতির ঘটনা তুলে ধরে গত বছরের ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অর্থ ও হিসাব বিভাগ) মো. এমারত হোসেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বিএসএমএমইউর সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম জালজালিয়াতির মাধ্যমে ইউজিসির অর্গানোগ্রাম নকল করে, কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি নেন। পরে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতিও নেন। তিনি ১৯৯৮ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। তার প্রথম নিয়োগ থেকে শুরু করে সবশেষ পদোন্নতি সব সঠিক নিয়মে হয়নি বিধায় ২০২১-২২ অর্থবছরের সরকারি অডিট অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্ট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। সরকারি অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় আশরাফুল ইসলামসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতির মাধ্যমে প্রাপ্য বেতন-ভাতা থেকে ৪৫ লাখ ২০ হাজার ৭৮৮ টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিএসএমএমইউর বর্তমান প্রশাসন ঘটনা তদন্তে গত ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খানকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. স্বপন কুমার তপাদারকে সদস্য

সচিব করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক দেবব্রত বণিক, অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম। কমিটিতে আশরাফুল ইসলামের প্রথম নিয়োগ, পরবর্তী সময়ে পদোন্নতি ও এরই মধ্যে উত্থাপতি অডিট আপত্তির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।

নথিপত্রের তথ্য বলছে, মো. আশরাফুল ইসলামকে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল দ্বিতীয় শ্রেণির ১০ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে অডিট সুপারিনটেনডেন্টের নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই পদে চাকরি করেন। ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি নীতিমালা (অডিট সেল) প্রস্তাব পেশ করা হয় এবং ২৭ মার্চ ৪২তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতি নীতিমালা অনুমোদন পায় এবং ওইদিন থেকে কার্যকর বলে গণ্য করা হয়। পদোন্নতি নীতিমালা অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার পদ পদোন্নতি পেয়ে যান। অর্থাৎ তিনি চাকরি যোগদান করার ১ বছর ২ মাস ১৯ দিন পর পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর তিনি ২০১৭ সালের সহকারী পরিচালক (অডিট) পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৬৮তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তমতে সহকারী পরিচালক (অডিট) পদে পদোন্নতি পান। 

এদিকে, ইউজিসির চিঠি জাল করে ভুয়া পদ সৃজনের মাধ্যমে চাকরি নেওয়ার ঘটনা জানার পর বিএসএমএমইউর পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) গৌর কুমার মিত্র গত বছরের ১৪ আগস্ট ইউজিসিতে চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ২০০৭ সালের ৩০ জুলাইয়ে একই স্মারকের দুটি চিঠি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি চিঠিতে বিএসএমএমইউর অডিট সেলে অডিট সুপারিনটেনডেন্ট পদের কথা উল্লেখ আছে, আরেকটি চিঠিতে নেই। কোনো চিঠি সঠিক তা জানানোর জন্য অনুরাধ জানানো হলো। ওই চিঠি পাওয়ার পর নথিপত্র যাচাই শেষে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ইউজিসির পরিচালক (অর্থ ও হিসাব বিভাগ) মো. শাহ আলম একটি চিঠি পাঠান বিএসএমএমইউর রেজিস্ট্রারের দপ্তরে। চিঠিতে বিএসএমএমইউর অর্গানোগ্রামে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী অডিট সেলে মোট পদ আছে সাতটি, সেখানে অডিট সুপারিনটেনডেন্ট পদ নেই বলে জানানো হয়।

তথ্য বলছে, ২০০৭ সালের ৩০ জুলাইয়ে ইউজিসির পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মুহাম্মদ ইব্রাহিম কবিরের স্বাক্ষরিতে চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউজিসির অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিএসএমএমইউসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট সেলে একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক, একজন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার, দুজন অডিটর, একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএসএসর পদসহ মোট সাতটি পদ রয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক, দুজন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার, একজন অডিট সুপারিনটেনডেন্ট, চারজন অডিটর, একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং দুজন এমএলএসএসর পদসহ মোট ১২টি পদ রয়েছে। একটি জালিয়াতি চক্র ঢাবিসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির মতো একটি চিঠিতে বিএসএমএমইউর নামযুক্ত করে সে অনুযায়ী বিএসএমএমইউতে পদ সৃজনের চেষ্টা চালায়। পরে ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সহকারী পরিচালক (অডিট), অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার, অডিট সুপারিনটেনডেন্ট, অডিটর, নার্সসহ ১৮টি জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কয়েকদিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় একজন সহকারী পরিচালক, একজন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার, একজন অডিট সুপারিনটেনডেন্ট, দুজন অডিটরের পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেওয়া হয়।

সদ্য অবসরে যাওয়া ইউজিসির পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, বিএসএমএমইউতে দুটি বিভাগ। একটি হচ্ছে যারা কনসালট্যান্ট আছে, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফান্ড পায় তাদের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমোদন প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া অধ্যাপকসহ যত কর্মকর্তা আছে তাদের পদ সৃষ্টি করতে হলে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া কোনো পদ সৃজন হলে সেটি অবৈধ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী প্রাপ্য টাকা থেকে বেশি টাকা নিয়েছে। সে বিষয়ে অডিট রিপোর্ট দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রমাণিত হবে আমি দোষী কি না। আর যে অডিট আপত্তি উঠেছে, সেটিও মীমাংসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে। অন্য কর্মচারীর ক্ষেত্রে সেটির প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট চাইলে নতুন পদ সৃষ্টি করতে পারে। বিএসএমএমইউর সিন্ডিকেট প্রথম অডিট সুপারিনটেনডেন্ট পদ সৃষ্টি করে, এরপর আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের পর সিন্ডিকেট সভায় অডিট সুপারিনটেনডেন্ট ও অডিটর পদ রূপান্তর করে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার এবং অডিট সুপার পদে রূপান্তর করে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011493921279907