যশোরের চৌগাছা উপজেলার শমসের আলীর ছেলে রাসেল হোসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য ২০১৯ সালে সাত লাখ টাকা দেন এক প্রতারক চক্রের হাতে। চক্রটি সাক্ষাৎকার শেষে গত বছরের ২৩ জানুয়ারি নিয়োগপত্র দেয় রাসেলকে। নিয়োগপত্রটিতে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি যোগদানের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু ওই চক্রই রাসেলকে ফের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অফিস সহায়ক পদে চাকরির নিয়োগপত্র দেয়। চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে বুঝতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।
একইভাবে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির জন্য ওই চক্রের কাছে সাত লাখ টাকা দেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার বুরিন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সজিব হোসেন। ২০২১ সালের ১৮ মার্চ সজিবকে নিয়োগপত্র দেয় চক্রটি। কিন্তু যোগদান করতে গিয়ে দেখেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।
এই চক্রের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে প্রতারিত হয়েছেন যশোরের চৌগাছার ইমরান হোসেন, মনিরামপুরের আরিফ বিল্লাহসহ অনেকে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে চক্রটি।
প্রতারণার শিকার হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগী রাসেল হোসেনের খালা শেফালি আক্তারসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী। শেফালি জানিয়েছেন, তার দুই ভাগনেসহ অন্য আত্মীয়দের জন্য মোট ৩১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছে এ চক্রের কাছে। এর পরই তদন্তে নামে ডিবি। অবশেষে গত রবিবার তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা ও গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতাসহ ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চক্রের হোতা মো. কামরুজ্জামান, তার সহযোগী মো. আবু রায়হান ওরফে রিয়াদ ও মো. নাজির হোসেন । চক্রটি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘চক্রটি অসংখ্য মানুষের সঙ্গে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরা চুক্তিবদ্ধ প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকে ছয়-সাত লাখ টাকা নিয়ে থাকে। এ টাকা দিয়ে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ঠিকানায় জায়গা জমি, বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছে।’ তিনি বলেন, ‘চক্রটির বিরুদ্ধে ডিএমপির সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
প্রতারক চক্রের নাজির হোসেনের সঙ্গে ২০১৯ সালে শেফালির পরিচয় হয়। ন্যাশনাল মেডিকেল হসপিটালের ওয়ার্ডবয় নাজির। শেফালিকে সে জানায় তার একজন লোক আছে যে টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতে পারে। তখন শেফালি নাজিরকে তার দুই বেকার ভাগিনার কথা বলে। নাজির হোসেন বাদীর ভাগিনাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকরির কথা বলে। পরে নাজিরের মাধ্যমে চক্রের কামরুজ্জামান, আবু রায়হান ও মোখলেছুর রহমান মুকুলের পরিচয় হয়। চক্রটি শেফালির ভাগিনা এবং পরে দুই ভাতিজার চাকরির কথা বলে বিভিন্ন ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে কৌশলে ৩১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে শেফালি যাচাই-বাছাই করে জানতে পারেন ওই নিয়োগপত্রগুলো ভুয়া।
অভিযানসংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা জানান, চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণা করে থাকে। প্রথমে তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হলে তারা চক্রের আরেকজনকে কোনো দপ্তরের ঊর্ধ্বতন অফিসার বা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগীদের চাকরি দেওয়ার চুক্তি করে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য কোনো কোনো সময় চক্রের সদস্যরা সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা করে ও চাকরির আশ্বাস দেয়। এমনকি চাকরির মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর চাকরি হয়েছে বলে ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে।