যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা-প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস (কিউএস) ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং’ প্রকাশ করেছে চলতি মাসে। এই র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫৪তম অবস্থানে রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬৯১ থেকে ৭০০-এর মধ্যে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গেছে প্রায় ১৪০ ধাপ। বুধবার (১২ জুন) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম’ ক্যাটাগরিতে ভূতুড়ে স্কোরের কারণে র্যাঙ্কিংয়ে উল্লম্ফন ঘটেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ, গত বছরের প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর ছিল ৩০ দশমিক ৩। অথচ চলতি বছরে এ ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কোর হয়েছে ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিক এমন স্কোর বৃদ্ধির কারণেই এগিয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাঙ্কিংও।
তথ্যমতে, কয়েকটি সূচকের ভিত্তিতে এ র্যাঙ্কিং করে থাকে কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডস। এই সূচকগুলো হলো- একাডেমিক খ্যাতি (একাডেমিক রেপুটেশন), চাকরির বাজারে সুনাম (এমপ্লয়ার রেপুটেশন), শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত (ফ্যাকাল্টি-স্টুডেন্ট রেশিও), শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি (সাইটেশনস পার ফ্যাকাল্টি), আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি রেশিও), আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রেশিও), আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক (ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ নেটওয়ার্ক), কর্মসংস্থান (এমপ্লয়মেন্ট আউটকামস), ও স্থায়িত্ব (সাসটেইনেবিলিটি)।
র্যাঙ্কিং তথ্যমতে, চলতি বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গড় স্কোর ২২ দশমিক ৪। বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক রেপুটেশনে স্কোর ২৩, এমপ্লয়ার রেপুটেশনে ৪৫ দশমিক ৬, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে ১১ দশমিক ২, শিক্ষকপ্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতিতে ২ দশমিক ৯, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাতে ১ দশমিক ৬, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাতে ১, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্কে ৫২, স্থায়িত্বে স্কোর ১১ দশমিক ৮।
আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পেয়েছে ৯৩ দশমিক ৭ স্কোর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ এমপ্লয়মেন্ট আউটকামস স্কোরকে অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। কারণ, গত বছর প্রকাশিত কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে পেয়েছিল মাত্র ৩০ দশমিক ৩ স্কোর। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই ক্যাটাগরিতে ৬৩ স্কোরের বেশি এগিয়ে যাওয়াকে অসম্ভব বলে মনে করছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। কারণ চলতি বছরের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্যাটাগরিতে পেয়েছে মাত্র ২২ দশমিক ২ স্কোর।এ ছাড়া চলতি বছরের কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে দেখা গেছে, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে পেয়েছে ৯৩ দশমিক ৪ স্কোর, নবম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের ইউসিএল ইউনিভার্সিটি এ ক্যাটাগরিতে পেয়েছে ৭০ দশমিক ৩ স্কোর। অর্থাৎ, এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে শীর্ষে থাকা এসব বিশ্ববিদ্যালয়কেও ছাড়িয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উল্লম্ফন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, কিউএস র্যাঙ্কিং তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো তথ্য চাওয়া হয় না। তারা নিজেরাই বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে উল্লেখ করা ৯৩ দশমিক ৭ স্কোরের সত্যতা রয়েছে বলে দাবি করেন উপাচার্য।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, এমপ্লয়মেন্ট আউটকাম ক্যাটাগরিতে এক বছরে ৬৩ স্কোর বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। এটি অস্বাভাবিক ও অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। এখানে তথ্যগত গরমিল থাকতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান প্রতিবেদককে বলেন, এসব র্যাঙ্কিং পদ্ধতি অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যনির্ভর। র্যাঙ্কিংয়ে নজর না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া।