ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ঝালকাঠি জেলাকে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্বপ্নের ঘরে এখন শত শত পরিবারের ঠাঁই হয়েছে। কৃষি আর ছোট ছোট কাজকর্ম করে স্বনির্ভর হচ্ছে এক একটি সংসার। প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হলেও ভবিষতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য চলবে এ কর্মসূচি।
গত ৯ আগস্ট চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার মধ্য দিয়ে ঝালকাঠি জেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা সদরে ১৩৫ এবং কাঠালিয়া উপজেলায় নতুন করে ৫০টি পরিবারকে দেয়া হয় নতুন ঘর। প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার দেয়ার অনুষ্ঠানে ঘরসহ দুই শতক জমির দলিল পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। আর যারা এর আগে এ উপহার পেয়েছেন, সেসব পরিবার নিজের ঘরে মাথাগোঁজার পর একটু একটু করে স্বনির্ভর হচ্ছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন আবার কেউবা কৃষি কাজ করে আয় করছেন। বিধাব, স্বামী পরিত্যাক্তা, তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক ও পঙ্গু নারী-পুরুষও পেয়েছেন স্বপ্নের এ ঘর। তাইতো অন্যের অনুগ্রহ কিংবা অবেহেলার অবসান ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীকে অকুন্ঠ ধন্যবাদ জানান আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।
কাঠালিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের মায়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এতোদিন অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। মাস শেষে ঘর ভাড়ার জন্য মাথায় চাপ থাকতো। কোনো কোনো মাসে ভাড়া দিতে না পারলে গালমন্দ শুনতে হতো। এখন আর কোনো চিন্তা নেই। নিজের ঘরে থাকবো।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার চরকুতুবনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭৫টি পরিবার তৃতীয় পর্যায়ে ঘর পেয়েছে। ওই প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আশ্রয়ণের বাসিন্দারা কেউ কৃষি কাজে, কেউ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালনে আবার কেউ ছোট দোকান করে স্বনির্ভর হয়েছেন। ফলে পরিবারগুলোর আপন ঠিকানা হওয়ার পাশাপাশি দূর হয়েছে সংসারের অভাব।
রেখা বেগম নামের এক নারী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ১০টি মুরগী পালন করছি। আর বাড়ির পেছনে আছে শাক-সবজির চাষ। ডিম বিক্রি করতে পারছি। আর নিজেদের তরকারি কিনতে হয় না।
গত ৯ আগস্ট সদর উপজেলার অনিতা রানী শীল নামের বিধবা নারী ঘরের দলিল পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রতিমাসে ঘর ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার কটু কথা শুনতে হতো। এত আর কেউ আমাদের কটু কথা বলতে পারবেনা। আমার নিজের একটি ঠিকানা হয়েছে। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হলেও এ প্রাক্রিয়া চলবে। প্রকৃতিক দুর্যোগসহ কেউ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমিসহ ঘরের এ সহযোগিতা অব্যহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকে চতুর্থ ধাপে ঝালকাঠি জেলায় মোট ২ হাজার ১০১টি পরিবারকে দুইশতক জমিসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এ ঘর দেয়া হয়েছে।