ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ ভোলার জনসাধারণ। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভোলা সদর জেনারেল হাসপাতালের আধুনিক সাত তলা ভবনটি নির্মাণের তিন বছর পরও আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় অযত্ম-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। পুরনো ভবনে শয্যা সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে কাঙিক্ষত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাততলা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন বলে কথা ছিলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য সকালে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হলরুমে উপস্থিত হন ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব, ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান, ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম, ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী, হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স, স্টাফ এবং ভোলার গণমাধ্যমকর্মীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় জানানো হয় হাসপাতালটি আজ উদ্বোধন করা হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেবিকেরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সারাদিন না খেয়ে বসে থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
কি কারণে হাসপাতালটি আজ উদ্বোধন হলো না সে বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. লোকমান হাকিম কোনো কারণ জানাতে পারেননি। তবে আগামীকাল শুক্রবার হাসপাতালটির উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কখন হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি।
সবকিছু প্রস্তুত থাকার পরও হাসপাতালটি চালু না হওয়া ও বারবার তারিখ পিছিয়ে দেয়ায় অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত ভবনটি উদ্বোধনের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার ভোলা জেনারেল হাসপাতালে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই সাত তলা ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ১ বছর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে গণপূর্ত বিভাগ। অথচ ভবনটি নির্ধারিত সময়ের আগে নির্মিত হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হওয়ায় পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা পান না ভোলার সেবা প্রত্যাশীরা। ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি বর্তমানে চলছে পুরনো ১০০ শয্যা ভবনের জনবল দিয়ে।
সাত তলা এই ভবনটিতে আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, মেডিক্যাল গ্যাস সিস্টেম, লিফট ও সিসি ক্যামেরাসহ রয়েছে উন্নত চিকিৎসা সেবার আধুনিক সুবিধা। কিন্তু তিন বছরেও ভবনটি পুরোদমে চালু না হওয়ায় দীর্ঘদিন পড়ে থেকে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ভবনটি ময়লা আবর্জনা আর ধুলাবালির আস্তরে পরিণত হয়েছে। চালুর আগেই ব্যবহার অনুপযোগী এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে।
ভোলা জেলার ৭ উপজেলার ২১ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্ সদর হাসপাতালসহ ৫০ শয্যার আরো ৭টি হাসপাতাল রয়েছে। এতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না থাকায় প্রতিদিনই রোগীদেরকে বরিশাল ও ঢাকায় যেতে হয়।