সাধারণত ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) দিয়ে থাকেন ভোক্তা। এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতেও গড়িমসি করেন অনেক ব্যবসায়ী। এমন ঘটনা ঘটেছে দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রেও। জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসেরও এই রেস্তোরাঁয় বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কর্তৃপক্ষের তাগাদার পরও ভোক্তাদের দেওয়া এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতেও টালবাহানা করেছে।
ফাঁকি দেওয়া এই রাজস্ব আদায় করতে সর্বশেষ ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট সর্বোচ্চ আইনের ব্যবহার করে রেস্তোরাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। এর প্রায় ২৭ দিন পর রেস্তোরাঁটি গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের টাকা জমা দেয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও তথ্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুরের রবিউল প্লাজায় অবস্থিত ক্রিকেটার সাকিবের মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ সাকিব ৭৫-এ অন্যান্য রেস্তোরাঁর তুলনায় ভিড় অনেক বেশি থাকে। ভ্যাট কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, দেশসেরা ক্রিকেটারের রেস্টুরেন্ট কি আর সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেবে! তাই অন্যান্য রেস্তোরাঁর তুলনায় ভ্যাট কর্মকর্তাদের নজরদারিও কম ছিল; কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ভ্যাট কর্মকর্তারা ভ্যাটের টাকা আদায় করতে মৌখিকভাবে এবং পরবর্তী সময়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এতেও কাজ হয়নি। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভ্যাট ফাঁকিতে নতুন কৌশল নেন সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটের এই চিঠি গ্রহণ না করে।
পরে এই নোটিশ গ্রহণ না করায় ঢাকা পশ্চিমের ভ্যাট কমিশনারেট আইনের প্রয়োগ করে। এতেও টালবাহানা করেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। সুদসহ ভ্যাট ফাঁকির ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা পরিশোধ না করার জন্য এক্ষেত্রে ভ্যাটের চিঠি গ্রহণ করেননি তারা। এসব কারণে সর্বশেষ কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম) থেকে গত ৫ ডিসেম্বর সাকিব ৭৫ রেস্টেুরেন্টের ব্যাংক হিসাব জব্দের চিঠি দেয় বিভিন্ন ব্যাংকে।
সরকারি-বেসরকারি ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি ইস্যু করেন ভ্যাট কমিশনারেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তবুও রেস্তোরাঁটি ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করেনি। অবশেষে গতকাল সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকে ভ্যাট ফাঁকির টাকা জমা দেওয়া হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কমিশনারেট থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি।
জানতে চাইলে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (পশ্চিম)-এর কমিশনার মোবারা খানম বলেন, সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্টের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কাছে দাবি করেন, রেস্তোরাঁটির পক্ষ থেকে ভ্যাট ফাঁকির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাব অবমুক্ত করা হয়নি। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চিঠি ইস্যু করা হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সাকিব ৭৫ রেস্তোরাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে অগ্রণী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংকসহ প্রায় ৬১টি ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয় ভ্যাট কমিশনারেট থেকে। ব্যাংক হিসাব জব্দের পর রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে ভ্যাট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তা-ও হিসাব জব্দের প্রায় ২৭ দিন পর। সাকিব ৭৫ রেস্টুরেন্টের আরেকটি শাখা রয়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সাকিব আল হাসানের রেস্টুরেন্টের ব্যাংক হিসাব জব্দের চিঠির বিষয়টি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।