ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল শনিবার তদন্ত শুরু হয়েছে। নির্যাতিত ছাত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত দুই তদন্ত কমিটি । ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করেছেন ওই ছাত্রী।
প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হলের তদন্ত কমিটি ও দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। ছাত্রীর কাছ থেকে চার পাতার লিখিত বক্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। উভয় কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হলটির গণরুমের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন তাঁরা।
সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে বলেছে তদন্ত কমিটি।
নির্যাতনে জড়িত পাঁচজনের নাম প্রকাশ করেছেন নির্যাতিত ছাত্রী। তাঁরা হলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম, মাওবীয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন ঊর্মি।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বাবা ও এক মামাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ওই ছাত্রী। প্রধান ফটক থেকে প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে সহকারী প্রক্টর জয়শ্রী সেন তাঁদের শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যান।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা মণ্ডল বলেন, 'তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। প্রশাসন থেকে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। গণরুমের মেয়েদের বক্তব্যও শোনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের সোমবার সকাল ১০টায় ডেকেছি। তদন্ত কাজে অনেকদূর এগিয়েছি।'
ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে তিনি হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে ছিলেন। এসময় অন্তরাসহ তিনজন কক্ষে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে গণরুম দোয়েল-২-এ নিয়ে তাঁরা নির্যাতন চালান। কিভাবে হলে ওঠলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন তারা। তিনি আরও বলেন, 'অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম আমি ও আমার পরিবার মেনে নিতে পারি না। পরিবার সাহস জোগানোয় আমি এগিয়ে যাচ্ছি। আমার হাতে লেখা চার পাতার একটি বর্ণনা কমিটি নিয়েছে।
তদন্তের সময় আমাকে কোনো বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়নি। কমিটির কাছে সঠিক বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা বলেছি।' পাবনার বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে এসে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পরে আবার বাড়ি ফিরে গেছেন।এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু'জন বলেন, ওই ছাত্রীকে যখন গণরুমে নিয়ে আসে তখন তারা সেখানে ছিলেন। তবে অন্তরা ছাড়া অন্যদের নাম তাঁরা প্রকাশ করতে রাজি হননি। গণরুমে ওই ছাত্রীকে একটি বিছানায় বসিয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে সবাই। এরপর এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় দিতে থাকে।
তারা ক্রমেই নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ঘটনার সময় ওই রুমে থাকা ২০২১-২১ বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, 'নির্যাতিত ছাত্রীর দেওয়া ঘটনার বর্ণনা সবই সত্য। তবে আমাদেরকে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে।'
এদিকে ভুক্তভোগীর জন্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান বলেন, 'বিষয়টা শুরুতে জানতে পারলে হয়তো বিভাগ থেকে দুই ছাত্রীকে ডেকে সমাধান করা যেত। এখন জাতীয় ইস্যু হয়েছে। পরে ভুক্তভোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা আমরা বিভাগ থেকে দেব।'
ওই ছাত্রীর মামা সাংবাদিকদের বলেন, 'এলাকার লোকজন প্রথমে ভেবেছিল, ছেলেরাও নির্যাতনের সময় উপস্থিত ছিল। আমরা বিষয়টা স্পষ্ট করেছি যে, শুধু মেয়েরা ছিল। পরিবারে ও সামাজিকভাবে আমরা অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি। সবাই খোঁজ নিচ্ছেন। মানসিকভাবে সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমরা হেয় প্রতিপন্ন হইনি।' ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের পর ন্যায়বিচার হবে। আমি চাই, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক- যেন এমন ঘটনা দেশে তথা বিশ্বে আর না ঘটে'।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, সারাদিন ভুক্তভোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানে যা যা করণীয়, আমরা তাই করেছি।