আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিলো।
উনিশশ একাত্তরের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক তারবার্তার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যা তৎকালীন ইপিআর এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
এর পরপরই মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ নেয় গোটা বাঙালি জাতি। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। ---এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বজ্রবাণীকে বুকে নিয়ে ২৫ মার্চ শেষ রাত থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে হামলা করে। পুলিশ তার প্রতিরোধ করে। কামানের গোলায় অনেকে শহীদ হন। কিন্তু প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যান। আসে নতুন ভোর। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুরু হয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রাম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে ঢাকা থেকে পালিয়ে যায় নরঘাতক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক জান্তা জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তানি পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। পরে তাকে অন্তরীণ করে রাখা হয় পাকিস্তানের জেলে। তার বিরুদ্ধে শুরু হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার।
বঙ্গবন্ধু জেলে আটক থাকাকালে তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাস-স্বাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন আজ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় একের পর এক মাইলফলক অর্জন এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে মহিমান্বিত করেছে।
প্রিয় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। অনেক প্রাপ্তি ও স্বপ্ন নিয়ে এবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ উপলক্ষে জাতির শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিশিষ্ট জনেরা শ্রদ্ধা জানাবেন।
এ দিবসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে দৃশ্যমান ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করছে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাণীতে দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেছেন।