বৈশ্বিক সংকটের মুখে কৃচ্ছ্র সাধনসহ পাঁচ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যসব নির্দেশের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন হার বাড়াতে মনিটরিং, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ধরে রাখা, হুন্ডি প্রতিরোধ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। বুধবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বাজেট সংক্রান্ত বৈঠকে এসব নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি বলে বৈঠকে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সার সংক্ষেপ এসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মিজান চৌধুরী।
সূত্র মতে, প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের একটি ‘সার সংক্ষেপ’ বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। এছাড়া সংশিষ্ট বিভাগ-অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং বাজেট সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোরভাবে কৃচ্ছ্র সাধন করতে বলেন। বিশেষ করে সরকারি আমলাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেন। অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া এডিবি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার কারণ জানতে চান। এ বিষয়ে তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জোরদার করতে মনিটরিং করতে বলেন। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের ক্ষেত্রে তিনি বর্তমান রির্জাভকে ধরে রাখতে বলেছেন। আর ডলার প্রাপ্যতা বাড়াতে জোর দিতে বলেছেন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর। বিশেষ করে হুন্ডি বন্ধ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে বলেছেন। ওই বৈঠকে তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভাল আছে এমর্মে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন অর্থমন্ত্রী। এই অবস্থায় আগামী অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আগামীতেও ঋণের সুদ, ভর্তুকি ও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়ছে। আগামী অর্থবছর ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের রূপ রেখা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেট হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এডিপি অনুমোদন দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুরো বাজেটের ’সার সংক্ষেপ’ উত্থাপন করা হয়েছে। যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তা চূড়ান্ত করে পহেলা জুন জাতীয় সংসদে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪’ আকারে ঘোষণা করা হবে।
ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে আগামী বাজেটের রূপ রেখার পাশাপাশি সব ধরনের চ্যালেঞ্জ, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলো তুলে ধরা হয়। নতুন অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। আগামী বাজেটে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদিকে নতুন বাজেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে। কারণ আগামী দিনগুলোতেও মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে-এমনটি ধরে নেওয়া হয়েছে। ওই হিসেবে আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ দমমিক ৫ শতাংশ।
সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এটি বেড়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা হবে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের শেষ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়।