দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রোকনপুর দালিখ মাদরাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে। এমনকি পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে তা গোপন রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টিও চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগের আগেই পছন্দ মতো নিরাপত্তাকর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদে তিনজন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছে নিয়োগ কমিটি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে মনোনয়নের আবেদন করছেন এই কমিটি।
জানা গেছে, তালম ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। তার ছেলে রাব্বিকে মাদরাসার নিরাপত্তাপ্রহরী পদে চাকরির জন্য রোকনপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি আলামিন কাওসার ও ভারপ্রাপ্ত সুপার কেবিএম আব্দুল মান্নানকে ৪ লাখ টাকা দেন। এ জন্য আবুল কালাম তার ৫টি গরু বিক্রি করতে হয়েছে। আবুল কালামের স্ত্রী ও রাব্বির মা সাজেদা খাতুনের কথায় বেরিয়ে আসে চাকরি দেওয়ার আগেই টাকা নেয়ার সব তথ্য। রাব্বির মা বলেন, ১০ লাখের বেশি টাকা চেয়েছেন আমার ছেলের চাকরির জন্য। ভেবেছি যেটুকু জমি আছে সেটাও বেচে দেব।
স্থানীয় ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা বলেন, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রোকনপুর মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সভাপতি আলামিন হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সুপার কেবিএম আব্দুল মান্নানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এ মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোকনপুর মাদরাসার সভাপতি কাওছার মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা ব্যক্তি। মূলত সে সভাপতি হওয়ার পর থেকে এই মাদরাসার বেহাল দশা। এ মাদরাসাতে ১৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে বেতনভুক্ত। কিন্তু অধিকাংশ দিন প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ শ্রেণিতে ১০ জন ছাত্রছাত্রীও উপস্থিত হয় না। বিশেষ করে তারা ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য রোকনপুর মাদরাসার সভাপতি ও সুপারকে অপসরণের দাবি তুলেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ তারিখ) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, রোকনপুর মাদরাসার নবম শ্রেণিতে ক্লাস করছেন ৬ জন শিক্ষার্থী। দশম শ্রেণির হাফছা নামে একজনসহ আরও দুইজন ছাত্রী কমন রুমে বসে
গল্প করছেন। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য বেঞ্চ রয়েছে মাত্র ৪ থেকে ৫টি করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেন, নবম শ্রেণিতে ৬ থেকে ৭ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয় না। আজকে ৬ষ্ট, ৯ম ও ১০ শ্রেণি মিলে ৯ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত আছে মাদরাসাতে।
রোকনপুর মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কেবিএম আব্দুল মান্নান বলেন, নিয়োগ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না। মাদরাসার সভাপতি আলামিন কাওছারের কাছ থেকে সব জেনে নিন।
রোকনপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি ও তালম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন কাওসার বলেন, জীবনে কিছু করতে পারি নাই। নিয়োগের টাকা থেকে একটা অংশ আপনাকেও পৌঁছে দেওয়া হবে! এ নিয়ে লেখালেখি হলে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে পুনঃনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা বলেন, আগে অভিযোগগুলো ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তারপর নিয়োগ।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আফছার আলী বলেন, চাকরির জন্য যিনি টাকা দিয়েছেন ও যারা টাকা নিয়েছেন প্রমাণসহ আমাকে দেন। আমি এদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করব এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করব।
বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডের পরিচালক মোহাম্মদ আবু নঈম (প্রসাশন ও অর্থ) বলেন, বাংলাদেশের কোথাও সিরাজগঞ্জের মতো নিয়োগ বাণিজ্য হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাঠিয়ে দিন। আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব।