দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির আলোকে মাদরাসা শিক্ষায় স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি করেছে বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ নামের একটি সংগঠন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মাদরাসা প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ দাবি তোলে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র চলছে। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী শিক্ষাকে মুছে দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষাকে গলা টিপে হত্যার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষাকে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় পরিণত করার অপপ্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস, আদর্শ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং কার্যক্রম মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
বক্তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘নতুন বছরের ১০টি পাঠ্যপুস্তকের ৯টিতে সুকৌশলে ইসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতিকে পাশ কাটিয়ে ভিনদেশী কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরা হয়েছে। পুরো বইয়ের কোথাও কুরআন-হাদিসের কোনো আলোচনা, নাম, বাণী, শিক্ষা কোনো কিছুই নেই৷ অথচ পুরানের কাহিনী, গ্রীক, বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের বিভিন্ন বিশ্বাসসহ দেব-দেবীর নগ্ন ও অসংখ্য ছবি আছে। এছাড়া বিজ্ঞানের নামে নগ্ন-অশ্লীল নানা ছবি, অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানুষের সঙ্গে কুকুরের ছবি ও হিজাববিহীন মেয়েদের ছবি আছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।’
সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে মাদরাসা শিক্ষক নিয়ে ছয় দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মাদরাসার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা, মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে মাদরাসার বই লেখা, বিষয় নির্বাচন ও কন্টেন্ট তৈরি করা, স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত মাদরাসায় প্রচলিত শিক্ষক্রম পড়াতে হবে, মাদরাসা শিক্ষার জন্য মাদরাসার মূল বিষয়গুলো ঠিক রেখে সাধারণ বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পাবলিক পরীক্ষার নম্বর নির্ধারণ করা, সংখ্যাগরিষ্ঠদের মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে নতুন শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা এবং এসএসসি পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।সংগঠনটির সভাপতি হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব এ কে এম মনোত্তর আলী। অনুষ্ঠানে ঢাকার নেছারিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হায়দার আলী আকন, মোহাম্মদপুরের গাউছিয়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আ ন ম মাহবুবুর রহমান, ঢাকার হাজী মরণ আলী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার, সিলেটের হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ্ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ কুতবুল আলমসহ বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বক্তব্য রাখেন।