শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তি রচিত হয় মাধ্যমিক স্তরে। তাই মাধ্যমিক শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। মাধ্যমিক শিক্ষার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম নিয়ামক শক্তি হলো শিক্ষক, বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি বিদ্যালয়ের সর্বদিক দেখভাল করে থাকেন। তাই একজন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে যেমন শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন তেমনি সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান হতে হবে। কিন্তু বর্তমান নীতিমালায় প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো স্নাতক ডিগ্রিসহ বিএড ডিগ্রি/সমমান এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম ৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো স্নাতক ডিগ্রিসহ বিএড ডিগ্রি/সমমান এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। অথচ বর্তমান বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন সহকারী শিক্ষক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স /মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে এনটিআরসিএর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করেন।
পক্ষান্তরে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি হওয়ায় এবং ম্যানেজিং কমিটির অধীনে নিয়োগ থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অযোগ্য, অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষক কমিটিকে বড় অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কারণ তারা মনে করেন ৩-৪ বছর চাকরি করলেই তাদের দেয়া উৎকোচ উঠে আসবে। তাই নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রথম থেকে তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি, কর্মচারী নিয়োগে অবৈধ আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করলে বা সোচ্চার হলে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে হয়রানি করে, এমনকি কমিটির সঙ্গে যোগসাজসে তাকে বহিষ্কার করেন।
এ ভয়ে শিক্ষকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। অনেক প্রধান শিক্ষক সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে কিছু অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তাদের পক্ষে নেন। পক্ষান্তরে অন্য শিক্ষকদের সব সময় চাপে রাখেন। এতে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অন্যতম কাজ হলো ক্লাস মনিটরিং করা, যার জন্য প্রধানদের বিভিন্ন বিষয়ে ন্যূনতম মৌলিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক কিন্তু কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ শিক্ষকদের তা নেই। অথচ মাধ্যমিক শিক্ষাই হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। তাই মাধ্যমিক শিক্ষাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য এবং এর ভিত মজবুত করার জন্য সৎ, দক্ষ, নৈতিকতাসম্পন্ন একজন আদর্শবান প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি।ফলশ্রুতিতে, মাধ্যমিক স্তরের সহকারী শিক্ষক, কর্মচারী এবং অভিভাবকসহ সচেতন মহল মনে করেন প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হওয়া উচিৎ যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ বিএড ডিগ্রি/সমমান এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ন্যূনতম ৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হওয়া উচিৎ যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ বি এড ডিগ্রি/সমমান এবং এমপিও ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক পদে ন্যূনতম ৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। অথবা স্নাতক ডিগ্রিসহ এমএড ডিগ্রি/সমমান এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক পদে ন্যূনতম ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে দেশ যত শিক্ষিত, সে দেশ তত উন্নত। কাজেই জাতির মেরুদণ্ডকে শক্ত, সোজা এবং মজবুত করতে মাধ্যমিক স্তরকে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। মাধ্যমিক স্তরের সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান এবং কর্মচারী এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। পরিশেষে অভিভাবক,শিক্ষক এবং সচেতন মহলের প্রত্যাশা শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টির প্রতি সুদৃষ্টি দিবেন।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়, ধুনট, বগুড়া
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)